স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : বর্ষার শুরুতে এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। প্রতি বছরের জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়। পরবর্তীতে সেপ্টেম্বর অক্টোবরে গিয়ে সেটা মারাত্মক আকার ধারণ করে। এই প্রবণতা বিচেনায় রেখেই মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন। গত মাসে জেলার মাসিক সমন্বয় সভার মিটিং এ ডেঙ্গু মোকাবেলায় জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে সপ্তাহ ব্যাপি ক্রাশ প্রোগ্রাম চালুর কথা থাকলেও তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি ডেঙ্গু কর্ণার। হাসপাতাল এলাকায় অপরিস্কার আর জমে থাকা পানিতেই জন্ম হচ্ছে হাজার হাজার মশার। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচার পত্রের দেখা মেলেনি কিংবা কানে শোনা যায়নি ডেঙ্গু সচেতনতায় কোনো প্রকার মাইকিং। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়সারা মিষ্টি কথার ভিতরেই যেন সব সচেতনতা সীমাবদ্ধ। এমন চিত্র যশোর জেলা জুড়ে। অথচ এই জেলায় বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) জেলার সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যমতে জানা গেছে, গত বছর এই জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ৪ হাজার ৮ শত ২২ জন। তাদের ভিতরে মারা যান ১৯ জন রোগী এবং ৮৭ জন রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয়। আর আগে ২২ সালে এই জ্বরে আক্রান্ত রোগী ছিলো ৯ শত ৩০ জন এবং ২১ সালে রোগীর সংখ্যা ছিলো মাত্র ১শত ৪৫ জন। তবে ২১ ও ২২ সালে কত জন রোগী এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি পরিসংখ্যান বিভাগ।

চলতি বছরে ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম শুরুতেই আক্রান্ত রোগীর সংথ্যা ১৪ জন। আক্রান্ত ১৪ জনের মধ্যে একজন রোগী মারা গেছেন। যশোর জেনারেল হাসপাতালে সমগ্র জেলা থেকে রোগী এসে ভর্তি হয়। এখনও পর্যন্ত মোট ১০ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা গেছে সদর হাসপাতালে। বাকি ৩ জনের মধ্যে ২ জন অভয়নগর উপজেলা ও ১ জন কেশবপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন। অর্থাৎ গেল বছরে এই জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে রের্কড সংখ্যক রোগী মারা যায়। সেক্ষেত্রে বর্তমানে ডেঙ্গু নিয়ে যেমন পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন তেমন কোনো লক্ষণ চোখে পড়ছে না। এক্ষেত্রে সাধারণ জন সাধারণের মধ্যে অনেকটা ভীতি কাজ করছে।

ডেঙ্গু জ¦র মোকাবেলায় কোনো নির্দেশনা পেয়েছেন কিনা সে বিষয়ে যশোর পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুন্ডু বলেন, জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে আমরা এখনও কোনো নির্দেশনা পায়নি। যশোর পৌরসভা থেকে এডিস মশা নিধনে কাজ খুব দ্রুত শুরু করবে। আমরা গতবারের চেয়ে ভালো ওষুধ স্প্রে করার চিন্তা ভাবনা করছি। এখনি সেটা করতে পারছি না। বর্ষার পানিতে ওষুধ ধুয়ে গেলে তো কাজ হবে না।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুস সামাদ ডেঙ্গু সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেননি। তিনি এই প্রতিবেদককে আগামি কাল আসতে বলেন। হাসপাতাল চত্ত্বর ঘুরে দেখা গেছে ডেঙ্গু সংক্রান্ত কোথাও কোনো নির্দেশনা দেওয়া নেয়। হাসপাতাল এলাকা অপরিস্কার, ড্রেন ও নিচু জায়গায় পড়ে থাকা পাত্রে অসংখ্য মশার লার্ভার দেখা মিলছে।

জেলার ডেঙ্গু পরিস্থিতি, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি বিষয়ে জানার জন্য সিভিল সার্জন অফিসে গেলে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো: নাজমুস সাদিক সার্টিফাইড সাংবাদিক কি না নসিয়ত করেন।

পরবর্তীতে সিভিল সার্জন ডা: মাহমুদুল হাসানের উপস্থিতিতে তিনি বলেন, ডেঙ্গু সংক্রান্ত আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। আমরা হাসপাতাল গুলোতে ডেঙ্গু কর্ণার করার নির্দেশনা দিয়েছি। ডেঙ্গু মোকাবেলায় সামাজিক সচেতনতা দরকার। আপনারাও খেলালেখির মাধ্যমে সচেতন করেন।

(এসএ/এসপি/জুলাই ০২, ২০২৪)