শোভন সাহা, কালিগঞ্জ : এই বছর কোরবানি ঈদে একটি ছাগল ও বেশ কিছু পশু অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হওয়াকে কেন্দ্র করে অনেক ঘটনা আস্তে আস্তে উঠে আসে। তখনই উচ্চবংশীয় গরু ও দেশের সর্বোচ্চ দামের ছাগলকে জড়িয়ে আলোচনায় আসা সাদিক এগ্রোর ফার্মে থাকা নিষিদ্ধ ‘ব্রাহমা প্রজাতি’র ১৩টি গরুর সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এমন পরিস্থিতিতে আবার আলোচনায় আসলো যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাহমা প্রজাতির গরু। যদিই এই ব্রাহমা জাতের এই গরু মাংসের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ।

জানা গেছে, গরুর এ প্রজাতিটির উৎপত্তি মূলত ভারতে হলেও যুক্তরাষ্ট্রে আরও দু-তিনটি জাতের সংমিশ্রণে ব্রাহমা গরুকে আরো উন্নত করা হয়। এ জাতের গরু লালন-পালন করা হয় মূলত মাংসের জন্য। মাংসের বৃদ্ধিতে এই ধরনের গরুর বিকল্প নাই। এই জাতের গরু উচ্চ তাপমাত্রায় ভালো থাকে এরা, রোগবালাই কম, বাড়েও দ্রুত। কিন্তু গাভির দুধ উৎপাদনক্ষমতা খুবই কম। সে কারণেই বাংলাদেশে ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ জাতের গরু বাংলাদেশে পালন ও উৎপাদন নিষিদ্ধ না হলেও ২০১৬ সালে এক নীতিমালা দিয়ে এই জাতটিকে আমদানি নিষিদ্ধের তালিকায় রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রাহমা জাতের গরুর সিমেন বা বীজ বা শুক্রাণু এনে সরকার কয়েকটি জেলায় স্থানীয় খামারিদের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে এই জাতের গরু উৎপাদন শুরু করে। ব্রাহমা জাতের গরু স্বভাবে খুবই শান্ত। এ ছাড়া এই জাতের গরু বুদ্ধিমান, কৌতূহলী এবং কিছুটা লাজুক স্বভাবের। এরা প্রায়ই এদের আশেপাশের বিষয়ে বেশ আগ্রহী এবং নতুন জিনিসের প্রতি কৌতূহলি হয়। মাঝেমধ্যে লাফালাফি দৌড়াদৌড়ি করলেও খুব সীমিত। এ ছাড়া মালিক ও রাখালের কথা বা নির্দেশ বুঝতে পারে। বলা যেতে পারে এক ধরনের প্রভুভক্ত গরু এরা।

বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে ফ্রিজিয়ান গরুর সংকর হোলস্টেইন জাত আমদানি করে থাকে। এই প্রজাতির গাভি দিনে ৬ থেকে ৩০ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। আর এই জাতের ষাঁড়ের ওজন ৮০০ থেকে ১ হাজার কেজি। অন্যদিকে ব্রাহামা প্রজাতির ষাঁড়ের ওজন ১ হাজার ৪০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিদিন দেড় কেজি পর্যন্ত এই গরুর ওজন বাড়ে। কিন্তু সমস্যাটা হলো ব্রাহামা প্রজাতির গাভি দিনে তিন-চার লিটারের বেশি দুধ দেয় না। তীব্র গরমে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় ব্রাহমা গরু সুস্থ-স্বাভাবিক থাকতে পারে।

ব্রাহমা জাতের গরু তার আকৃতি অনুযায়ী বেশি দুধ দেয় না। যতটা দুধ দেয়, তাতে শুধু বাছুরের চাহিদাটুকু মেটে। খামারিরা অধিক মুনাফার আশায় যদি ব্যাপক হারে ব্রাহমা উৎপাদন করে তাহলে দেশে গরুর দুধের উৎপাদন কমে যাবে। মূলত বাংলাদেশে দুগ্ধ উৎপাদন খাতকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই বেসরকারি পর্যায়ে এ জাতের গরু আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই মূহুর্তে বাংলাদেশে যেসব ব্রাহমা জাতের গরু রয়েছে তার প্রায় সবই কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রজনন করা গরু। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মি. রহমান বলেছেন, মাংস বেশি হবার কারণে বাংলাদেশে দ্রুতই জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই জাতের গরু।

(এসএস/এসপি/জুলাই ০২, ২০২৪)