শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের মধপুর বাজারের ১ টাকার সিঙ্গাড়া, কাজল মোড়ের পিঁয়াজু, জেলা শহরের অগ্নিবীণা সড়কের মালাই চা, মোল্লা হোটেলের ভাজি-মাংসের স্বাদ যে একবার নিয়েছে সে বারবার ওই খাবারের প্রেমে পড়েছে। দলে দলে এসব খাবারের স্বাদ নিতে এখনো ছুটে আসছে ভোজনপ্রেমীরা।

এবার নতুন করে সবার মুখে মুখে ফিরেছে শৈলকুপার কাতলাগাড়ী বাজারের দাদা-বৌদি রসগোল্লা চা। যে চায়ের কাপে চিনির বদলে দেওয়া হচ্ছে রসে টইটম্বুর রসগোল্লা। এরপর আগে থেকে তৈরি করে রাখা দুধ ও চায়ের মিশ্রণ ঢালার পর কিচমিচ, এলাচ ও হরলিক্স দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে রসগোল্লার দুধ চা।

রসগোল্লার দুধ চা বিক্রি করে প্রতি মাসে লাখ টাকারও বেশি আয় করছেন শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের চরবাখরবা গ্রামের খাইরুল ইসলাম। চায়ের মধ্যে রসগোল্লা যোগ করে সৃষ্টি করেছেন নতুন স্বাদ। এ চায়ের জনপ্রিয়তাও এখন আকাশচুম্বী। প্রতি কাপ ৮০ টাকায় প্রতিদিন প্রায় ৬০ কেজি দুধের চা বিক্রি করছেন তিনি।

জানা গেছে, প্রতিদিন এ চায়ের স্বাদ নিতে ঝিনাইদহের শৈলকুপার কাতলাগাড়ি বাজারে ভিড় করছেন দূর-দুরান্ত থেকে আসা মানুষ। জেলা সদর, শৈলকুপা, হরিণাকুণ্ডু, পার্শ্ববর্তী জেলার কুমারখালী ও খোকসা চা প্রেমিরা আসছেন এখানে। এ ছাড়া আশপাশের জেলা থেকেও আসছেন মানুষ।

কাতলাগাড়ি বাজারে শুভ ইশান হুজাইফা টি স্টলে গিয়ে গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানা বয়সী মানুষ বসে আছেন এক কাপ চায়ের আশায়। দোকানি খাইরুল ইসলাম চা তৈরি করে সবার হাতে তুলে দিচ্ছেন। চা প্রেমিকরা জানান, বিভিন্ন স্বাদের চা পাওয়া যায় বলেই তারা সেখানে আসেন। তবে বেশির ভাগই আসছেন রসগোল্লা চায়ের টানে।

চা দোকানদার খাইরুল ইসলাম বলেন, ছোট থেকে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাজ করি। ১৯৯০ সাল থেকে নিজে দোকানে চা বিক্রি করি। ২০০৩ সালে দিকে বেচাকেনা কম হওয়ায় ঢাকায় চলে যাই। সেখান থেকে ২০১৩ সালের দিকে বাড়িতে ফিরে এসে বাজারে চায়ের দোকান দেই। তখন থেকে গরুর দুধের চা বিক্রি করি।

তিনি বলেন, দুধ চায়ের চাহিদা বাড়তে থাকায় চায়ের আইটেম বাড়ানোর চিন্তা করি। এরপর ভারতে গিয়ে দীর্ঘ ৮ মাস ধরে স্পেশাল মালাই চা, কাশ্মিরি চা, দাদা-বৌদির রসগোল্লা চা তৈরি করা শিখেছি। দেশে এসে শুরু করি বিভিন্ন আইটেমের চা বিক্রি। তখন থেকে ৫ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের চা বিক্রি করছি।

চা দোকানদার বলেন, দোকানের সব চা স্পেশাল, তার মধ্যে দাদা-বৌদির রসগোল্লা চা বেশি জনপ্রিয়। এ ছাড়া শুধু দুধ চা, মালাই চা, কাশ্মিরি চা, খেজুর গুড়ের চা, দুধ কফি, লাল কফি, লেবু চা, তেঁতুল চা, লাল চা বিক্রি করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসেন। ভিড়ের মধ্যে সবার সঙ্গে কথা বলতে পারি না। অনেকে আবার সময় কম থাকার কারণে চা না খেয়েই চলে যান।

খাইরুল ইসলাম আরও বলেন, দিনে ৪০/৬০ কেজির দুধের চা করি। এক কেজি দুধে তিন কাপ রসগোল্লা চা তৈরি হয়। এ চা করার জন্য আগে আগুনে ভালো করে দুধ ফুটিয়ে ঘন করতে হয়। তারপরে একটি কাপে আলাদা করে রাখা হয় দুধ এবং সর। সেখানে রাখা হয় একটি রসগোল্লা। তাতে মেশানো হয় চিনি, এলাচ, লবঙ্গ, কিসমিস এবং সামান্য পরিমাণ হরলিক্স। তারপরে চা পাতায় গরম পানি মিশিয়ে তা দেওয়া হয় ওই কাপে। মানুষকে ভিন্ন স্বাদের চা দিতেই রসগোল্লা চা করেছি।

কুষ্টিয়া থেকে চা খেতে আসা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি খুব একটা চা খাই না। তবে আজ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে তাদের সঙ্গে দাদা-বৌদির রসগোল্লা চায়ের স্বাদ নিতে এসেছি। এখানে যে চা খেলাম এর আগে কখনো খাইনি। চায়ের স্বাদ অন্যরকম।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী এলাকা থেকে চা খেতে আসা সাহেদ আহম্মেদ বলেন, শৈলকুপার শেষ সীমান্তে কাতলাগাড়ী বাজারে এ চায়ের দোকান। এখানকার চায়ের স্বাদ এক কথায় দারুণ। দাদা-বৌদির রসগোল্লা চা সাধারণ চায়ের থেকে অনেক বেশি স্পেশাল। তাই দূর-দুরান্ত থেকে ৭০/৮০ টাকা দামের এক কাপ চা খেতে সবাই ছুটে আসছে।

শৈলকুপা উপজেলা শহর থেকে আসা ডাবলু হোসেন বলেন, চিনি বা গুড়ের পরিবর্তে রসগোল্লা দিয়ে চা এক অন্য মাত্রা তৈরি করেছে। যে কারণে এ চায়ের স্বাদও অন্যরকম। সঙ্গে এলাচ, কিসমিস ও হরলিক্স চায়ের স্বাদ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মাঝে মধ্যে একাই চলে আসি এ চা খেতে। আবার যখন বাড়িতে কোনো মেহমান আসে তখন তাদেরকেও এ স্পেশাল চা খাওয়াতে নিয়ে আসি।

ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে চা খেতে আসা নাসির মল্লিক বলেন, এ চায়ের গল্প শুনে একটু স্বাদ নিতে এসেছি। এখানে এসে যে অভিজ্ঞতা হলো সেটা হচ্ছে, রসগোল্লার সঙ্গে কিসমিস, এলাচ, হরলিক্স দেওয়াতে স্বাদ বেড়ে যায়। চা খাওয়া শুরু করলে মুখে খাটি গরুর দুধের স্বাদ পাওয়া যায়। হরলিক্স আর রসগোল্লার একটা বিশেষ স্বাদ অনুভূত হয়। শেষে কিসমিস ও এলাচের স্বাদের পরিপূর্ণতা এনে দেয়।

(এসই/এএস/জুলাই ০২, ২০২৪)