রূপক মুখার্জি, নড়াইল : সূর্যোদয়ের দেশ জাপান ঘুরে এসে উচ্ছ্বাসিত নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এমদাদ-হন্জো আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষার্থী। ৮ দিনের সফরে জাপানের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দর্শনীয় স্থানসহ ওই দেশের রীতি নীতি দেখে শিক্ষার্থীরা অভিভূত। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হিসেবে সফরে গিয়েছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষিকা ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ড. সৈয়দ এমদাদুল হক।

সম্প্রতি বিদ্যালয়ের সেমিনার কক্ষে জাপান সফরত ৬ শিক্ষার্থী দশম শ্রেণীর সৈয়দা রাইসা, মুসলিমা জাহান তুলি, নবম শ্রেণীর সৈয়দা আতিফা রহমান, মোসাঃ রুকাইয়া শেখ জেরিন, সৈয়দা তাসনিয়া খানম ও অষ্টম শ্রেণীর মোসাঃ সিনথিয়াকে সবংর্ধনা দেয়া হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সামনে জাপান সফরের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি ব্যক্ত করেন ওই ৬ ছাত্রী। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যাওয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক মৌসুমী খানম বক্তব্যকালে জাপান সফরের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

অনুভূতি ব্যক্তকালে শিক্ষার্থীরা জানান, সফরকালে তারা জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি ও কিয়োটা ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেন। এসময় সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা, তাদের জীবনযাপনসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করেন। এছাড়া জাপানের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখে অভিভুত হয়েছেন। জাপানের ট্রাফিক ব্যবস্থাসহ জাপানীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখে আরো বেশি অভিভূত হয়েছে। এছাড়া জাপানী বন্ধু মি. রিউসুকে হন্জো আতিথেয়তা তাদেরকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ যদি জাপানের মতো আইন ও নিয়ম কানুন মেনে চলতো তাহলে বাংলাদেশ আরো অনেক এগিয়ে যেতো।

অনুভূতি ব্যক্তকালে সৈয়দা রাইসা বলেন,‘ আমাদের মতো গ্রামের একটি বিদ্যালয় হতে এভাবে জাপান সফরের সুযোগ পাবো, কখনো কল্পনা করতে পারি নাই। জাপান সফর যেন স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিলো। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খরচ বহন করে আমাদের জাপান ঘুরিয়ে এনেছে। ভালোভাবে পড়াশোনা করে আবারও জাপানে যাবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। ভালো পড়াশোনা করলে আমাদের এই বিদ্যালয় হতে আগামীতে আরো অনেকে জাপানে যাবার সুযোগ পাবে বলে আশা করি।’

বিদ্যালয় প্রতিতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা ড. সৈয়দ এমদাদুল হক (পিএইচডি) বলেন,‘ এই বিদ্যালয়টি জাপানের অর্থায়নে পরিচালিত হওয়ায় জাপানী বন্ধু মি. রিউসুকে হন্জো শিক্ষা সফরের সার্বিক আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যকার বন্ধনকে আরো দৃঢ় করা, উভয় দেশের রীতি নীতি সম্পর্কে ধারণার বহিঃপ্রকাশ এই শিক্ষা সফরের মুল উদ্দেশ্য। আমাদের ছাত্রীদের জন্য এই সফরটি দারুন আনন্দের। অনেকে রাজধানী ঢাকায় যাননি, আজ তারা জাপান সফর করে এসেছে। আগামীতেও বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রীদের জাপান সফরের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে যাতে জাপানে পড়াশোনা করতে পারে, সে ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ড. সৈয়দ এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুন্সী জোসেফ হোসেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী শামসুল হক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কাজী আব্দুল আলিম, ওহিদুর রহমান প্রমুখ। গত ৯ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা জাপান সফর করেন।

উল্লেখ্য যে, জাপানী বন্ধু মি. রিউসুকে হন্জোর সহযোগিতায় লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রামের সন্তান ড. সৈয়দ এমদাদুল হক নিজের ক্রয়কৃত ৫০ শতক জমির ওপর ৫ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে দ্বোতলা ভবন করে ২০১৫ সালে ৬ষ্ঠ হতে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পাঠদান শুরু হয়। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়টি যশোর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক একাডেমীক স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় এই বিদ্যালয় হতে ৮জন জিপিএ ৫ সহ শতভাগ পাশ করেছে।

(আরএম/এএস/জুলাই ০২, ২০২৪)