রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানাধীন হোগলাডাঙ্গী গ্রামের চাঞ্চল্যকর কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং ওই মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আজ সোমবার সকালে ফরিদপুর জেলা পুলিশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের ওই ঘটনা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. মোর্শেদ আলম।

প্রেস ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের মোর্শেদ আলম জানান, গত ২৮ জুন বিকেল আনুমানিক ৫ টার দিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানাধীন হোগলাডাঙ্গী গ্রামের জনৈক টুকু মাতুব্বর মামলা বাদী মেরী আক্তারের বাড়ীতে দৌড়ে এসে জানায় যে, মেরীর বাড়ীর দক্ষিণ পাশে জনৈক আলমগীর মোল্যার পাটক্ষেতে মেরীর মেয়ে রেখা (১৫)-এর লাশ পড়ে আছে। উক্ত সংবাদে এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। মেরী আক্তার তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মেয়ে রেখার লাশ সনাক্ত করেন। পরবর্তীতে পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে এবং মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তদের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ মর্গে প্রেরণ করে।

উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে নিহত রেখার মা মেরী আক্তার (৪২) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে ভাঙ্গা থানায় একটি ধর্ষণসহ হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২৯ জুন ২০২৪ তারিখেনারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনেমামলাটি করা হয়।

মামলা রুজুর পর ফরিদপুর পুলিশ সুপারের দিক নির্দেশনায় ভাঙ্গা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে গুপ্তচর নিয়োগ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত আসামী সনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য ভাঙ্গা থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি চৌকস দল অভিযান শুরু করে।

তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে শাহজালাল ওরফে শাহাদাতকে সনাক্ত করে পুলিশ। এরপর গত ২৯ জুন সন্ধ্যা ৭ টায় ভাঙ্গা পৌরসভার হোগলাডাঙ্গীর অভিযুক্তের বসতবাড়ী হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানায় যে, ভিকটিম তার সম্পর্কে চাচাত বোন হয়। গত ২৮ জুন বেলা অনুমান ১২.৩০ মিনিটের সময় ভিকটিম তাদের বাড়ীর উত্তর পাশের পুকুরে গোসল করতে যায়। ঐসময়ে উক্ত অভিযুক্ত পুকুর পাড়ে গিয়ে ভিকটিমকে মোবাইলে পর্নো ছবি দেখানোর লোভ দেখিয়ে ফুসলিয়ে পুকুরের পাশে থাকা জনৈক আলমগীর মোল্যার পাটক্ষেতে নিয়ে যায় এবং অভিযুক্ত শাহজালাল ওরফে শাহাদাত (১৬) ভিকটিমের পরনের স্যালোয়ার খুলে তাকে ধর্ষণ করে।

ধর্ষণ পরবর্তীতে ভিকটিম রেখা (১৫) ঘটনার কথা তার মা-বাবার কাছে বলে দিবে মর্মে জানায়। তখন অভিযুক্ত তাকে ঘটনার বিষয়ে কাউকে না বলার জন্য অনুরোধ করে। তবুও ভিকটিম তার অনুরোধ না শুনে ঘটনা বলে দিবে বলে জানায়। তখন অভিযুক্ত শাহজালাল ওরফে শাহাদাত (১৬) ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমকে লাল রঙের স্যালোয়ার দিয়ে তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে পালিয়ে ঘটনাস্থলের পাশে রেললাইন এর দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর সে নিজের বাড়িতে এসে এই ঘটনার বিষয়ে তার বাবা টুকু মাতুব্বর (৫০) কে জানায়। তখন তার বাবা তাকে গালমন্দ করে। এরপর অভিযুক্তের পিতা বিকাল অনুমান ৫ টার দিকে ধান ক্ষেত দেখতে যাওয়ার ভান করে ঘটনাস্থলে গিয়ে ডিসিস্টের লাশ দেখে এসে একটি নাটক সাজিয়ে বাদী মেরী আক্তা কে বলে যে, পাটক্ষেতের মধ্য তোমার মেয়ে রেখার লাশ পড়ে আছে।গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত শাহজালাল ওরফে শাহাদাত (১৬)'কে বিধিমোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। অভিযুক্ত স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

ফরিদপুর জেলা উক্ত প্রেস ব্রিফিং এ আরও উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, টি আই তুহিন লস্করসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

(আরআর/এসপি/জুলাই ০১, ২০২৪)