মিশুক আহমেদ জয়, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় গত কয়েক বছরে সাংবাদিক খুন সহ বেশ কয়েকটি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনায়ও আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি পুলিশ। ফলে হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে। সাংবাদিকরা বলছেন বার বার হামলা হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া যায়নি দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে এই কারণেই হামলা বাড়ছে।

কুষ্টিয়ায় গত কয়েক বছর ধরে একের পর সাংবাদিকদের ওপরে হামলার ঘটনা ঘটছে। খুন হয়েছেন আমাদের নতুন সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল। কিন্তু সেই মামলা প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ক্লুলেস মার্ডার হিসেবেই পুলিশের খাতায় বন্দি। সর্বশেষ সাংবাদিকের ওপর নির্মম হামলার ঘটনা ঘটেছে গত ১৯ জুন। কুষ্টিয়ার হাটশ হরিপুর বাজারে স্থানীয় দৈনিক সত্য খবর পত্রিকার সম্পাদক ও এশিয়ান টিভির কুষ্টিয়ায় কর্মরত স্টাফ রিপোর্টার হাসিবুর রহমান রিজুর ওপরে হামলা করে সন্ত্রাসীরা। সিসি ক্যামেরার মধ্যে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মম ভাবে জখম করে হাসিবুর রহমান রিজুকে। শুধু হামলা করেই থেমে থাকেনি। তাকে উদ্ধার করতে দেয়নি সন্ত্রাসীরা। র্দীর্ঘ সময় রাস্তার ওপরে হাসিবুর রহমান রিজুকে ফেলে রাখে থাকেন সন্ত্রাসীরা। হামলার পরের দিন সাংবাদিক রিজুর স্ত্রী টপি বিশ্বাস বাতদী হয়ে ১৬ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দয়ের করেন। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রিজু এখনও ঢাকা ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছেন। পুলিশ মামলার এজাহার নামীয় ১৫ নম্বর আসামীকে গ্রেফতার করে। এছাড়া অন্য কোন আসামী এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি।

২০২২ সালের জুলাই মাসে ৩ তারিখে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড় থেকে নিখোঁজ হন সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল। ৭ জুলাই শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতুর নীচে গড়াই নদীতে লাশ পাওয়া যায় রুবেলের। কুষ্টিয়ার কুম্রাখালী থানায় রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান মেজর বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আজো পুলিশের খাতায় ক্লুলেস। গত জানুয়ারী মাসে চ্যানেল ২৪ ফোর এর স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাসকে অফিস থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে বালু সন্ত্রাসীরা। পদ্মা নদীর মধ্যে এনটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাবিনা ইয়াসমিন শ্যামলীকে স্পিড বোর্ড থেকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে বালু উত্তোলনকারী সন্ত্রাসীরা। তারা ক্যামেরা মোবাইল কেড়ে নিয়ে যায়।

সর্বশেষ হামলার শিকার হাসিবুর রহমান রিজু। হামলার পরে সংক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা কুষ্টিয়ার বিভিন্ন থানা এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। আসামীদের গ্রেফতারের দাবীতে কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ মহাসড়ক ও কুষ্টিয়া কুষ্টিয়া পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সাংবাদিকরা। তারপরও পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করেনি।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব উল আলম হানিফ বলছেন সাংবাদিক নির্যাতনকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

সাংবাদিকরা বলছেন, যশোরের দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুলকে ১৯৯৮ সালের ৩০ আগষ্ট যশোর বেজপাড়ায় বোমা মেরে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের খুন হয়েছেন ১৯ জন সাংবাদিক। একটি হত্যারও বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বেড়ে চলেছে সাংবাদিক নির্যাতন।

কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, আন্দোলন করা হচ্ছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি’র সহ-সভাপতি মিলন উল্লাহ বলেন, যদি রুবেল হত্যার বিচার হতো তাহলে হাসিবুর রহমান রিজুর ওপর এই ধরণের নির্মম হামলার ঘটনা হতো না।

কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি’র সাধারণ সম্পাদক ও জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সোহেল রানা বলেন , বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাবো না।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কন্তি নাথ বলেন, আসামীরা গ্রেফতারের ভয়ে সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত ছিলো। আসামীরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়। তাই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

(এমএজে/এএস/জুন ৩০, ২০২৪)