স্টাফ রিপোর্টার : আবারও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে নিজের অবস্থান ‘ঠিক’ প্রমাণের চেষ্টা করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি সাংবাদিক চার্লি ক্যাম্পবেল মার্কিন সাপ্তাহিক টাইম-এ ড. ইউনুসকে নিয়ে সাক্ষাতকারভিত্তিক একটি লেখা হাজির করেছেন। যেখানে তিনি পূর্বের বিষয়গুলো কথার মারপ্যাঁচে নতুন মোড়কে হাজির করেছেন। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার, তাকে ঈর্ষা করা হয়, সরকারপ্রধানকে তার বিষয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হয়- এধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে ড. ইউনূস তার যে ‘অপরাধ’ তা এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও ইউনূসের কর্মকাণ্ড বিষয়ে বিদেশে ধারণা না থাকার কারণে এই ধরনের টেক্সট তৈরি করে ড. ইউনূস তার পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্মতি আদায় করে রাখতে চান।

উল্লেখ্য, সাংবাদিক চার্লি ক্যাম্পবেল একসময় টাইমের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ব্যুরো চিফ হিসেবে কাজ করেছেন। এখন পদাবনতি হয়ে শুধু করেসপন্ডেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর অসংখ্য বিতর্কিত লেখা রয়েছে। বিশেষ করে থাইল্যান্ড, চীন এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন তিনি। এর আগেও তিনি বাংলাদেশ নিয়ে একাধিক বিভ্রান্তিকর লেখা প্রকাশ করেছেন।

২৪ জুন প্রকাশিত নিবন্ধে চার্লি পুরোপুরি ইউনূসের বয়ানেই লিখেছেন। শুরুতে অবশ্য তিনি বলে নিয়েছেন, ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদন এটি। সাক্ষাৎকারে ইউনূস যা বলেছেন, তা-ই লিখেছেন চার্লি। ড. ইউনূস বাংলাদেশের মিডিয়াতে গত এক বছর যা বলে আসছেন, সে কথাগুলোই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এ প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।

এখানে আবারও ইউনূস দাবি করেছেন তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। যদিও গ্রামীন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রকৃতপক্ষে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ সরকার। গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩-এর মাধ্যমে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সরকার বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করে।

টাইম ম্যাগাজিনে ইউনুস বলেছেন, ইউনূস ১৯৭৪ সালে জোবরা গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প চালু করেন। প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. ইউনূস ১৯৭৪-এ দেশে আসেন। জোবরা গ্রামে যান ১৯৭৬ সালে, সেখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গ্রামবাসীকে ঋণ দেন। এরপর ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্প আকারে টাঙ্গাইলে এর কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে পল্লী ব্যাংকিং প্রকল্পের সাফল্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে, যার উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ মানুষদের ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া। পরের বছর চালু করা হয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্প, যা পরে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়, এর উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থানে সহযোগিতা করা। ড. ইউনুসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ড. বদিউর রহমানকে পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করা হয়। ড. ইউনুস উভয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য ছিলেন। অর্থাৎ সরকার তাদেরকে বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করেন। দুটি প্রতিষ্ঠানই সরকার-নিয়ন্ত্রিত।

তার অনেক এইধরনের অসত্য দাবির মধ্যে আরেকটি দাবি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ড. ইউনূসও বলেছেন, তিনি প্রতিহিংসা ও ঈর্ষার শিকার। এর জবাব খোদ প্রধানমন্ত্রী তার ২৫ জুনের সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, লিখেছে নোবেল প্রাইজের জন্য নাকি দ্বন্দ্ব! আমার জীবনেও নোবেল প্রাইজের জন্য আকাঙ্ক্ষা নেই। লবিস্ট রাখার মতো আমার টাকাও নেই পয়সাও নেই। আর আমি কখনও এটা চাইনি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার বিরুদ্ধে যে মামলা সেটা সরকার করেনি। তার বিরুদ্ধে আমরা বা আমাদের গভর্নমেন্ট লাগেনি। কল্যাণ ফান্ডের টাকা না দেওয়ার কারণে শ্রমিকরা মামলা করেছে। মামলা কিন্তু সরকার করেনি। শ্রমিকরা লেবার কোর্টে মামলা করেছে। সেই মামলায় সে শাস্তি পেয়েছে। এখানে আমার কী দোষ?

আমি দেখছি এই পুরস্কার যারা পায় তাদের আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু অবদান, সেটা নয়। এখানে আলাদা একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। কাজেই ওর মধ্যে আমার কোনও আকাঙ্ক্ষা নেই। আর বলে দিলো এটা নিয়ে নাকি আমি ওনার ওপরে জেলাসি! শেখ হাসিনা কারও সাথে জেলাসি করে না। শেখ হাসিনা ফাদার অব ন্যাশনের মেয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। অন্তত এই জায়গাটায় কেউ আসতে পারবে না। সেটাই আমার গর্ব। প্রধানমন্ত্রী এটা তো সাময়িক ব্যাপার। আমি শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি দেশও বেচি না, দেশের স্বার্থও বেচি না। দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই চলি। তার জন্য একবার আগে ক্ষমতায় আসতেও পারিনি। কিন্তু আমার কিছু আসে যায় না। আমি এর-ওর কাছে ধরনা দিয়ে বেড়াই না। সব থেকে বেশি যে করেছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওনার সাথে আমার জেলাসির কী আছে!

দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংক কোনও ভূমিকা রাখেনি এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে যারা ঋণ নিয়েছে, জমিজমা সব বেচে দিয়ে তারা ওখান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অনেকে আত্মহত্যা করেছে এই সুদের চাপে। আমি তাকে টাকা দিয়ে বলেছিলাম, এত সুদ না নিয়ে মানুষের জন্য যেন একটু সহনশীল করে দেন। মানুষ সত্যিকার অর্থে যেন দারিদ্র্য থেকে উঠে আসতে পারে।… এতই যদি করে থাকেন তাহলে দারিদ্র্য বিমোচন হলো না কেন বাংলাদেশে?

প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্টভাবে প্রতিটা বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন উল্লেখ আছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, ড. ইউনুস দেশের চেয়ে বিদেশের মানুষকে বোঝানোর দিকে বরাবরই বেশি আগ্রহী। তিনি তার মতো করে ব্যাখ্যা হাজির করে আন্তর্জাতিক মহলে। তিনি আসলে কী করেছেন সেসব আমাদের দিক থেকে বারবার বলার প্রয়োজন আছে।

(ওএস/এসপি/জুন ২৭, ২০২৪)