রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের কানাইপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)-এর দুই তলা অফিসটিতে সরেজমিন গিয়ে হিসাবরক্ষক কাজী হারুণ অর রশিদ ছাড়া আর কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পাওয়া যায়নি। অফিসে কম্পিউটার থাকলেও নেই কোন কম্পিউটার অপারেটর। হারুন অর রশিদ প্রায় সব কাজকর্ম হাতে লিখেই করেন।

বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় ফরিদপুর শিল্প নগরী (বিসিক) এর কানাইপুর অফিসে শিল্পনগরী কর্মকর্তা মাইনুল হাসানের রুমটি তালাবদ্ধ। অন্যরুমের ভিতরে একজন বসে আছেন। পরিচয় পর্বে জানা গেলো তিনি ওই অফিসের হিসাবরক্ষক। তিনি একাই করছেন অফিস। ওই অফিসে নেই কোন কর্মচারী, কর্মকর্তা।

হিসাব রক্ষক কাজী হারুণ অর রশিদ জানান, শিল্পনগরী কর্মকর্তা মাইনুল হাসান স্যার ভারপ্রাপ্ত শিল্পনগরী কর্মকর্তা, তিনি ফরিদপুরেই বসেন। অন্যরা ছুটিতে আছেন, কিছু পোস্ট ফাঁকা তাই আর কেউ নেই। প্রায় সময়ই অফিসিয়াল লোক হিসেবে আমি একাই থাকি। ৭ জনের কর্মচারি-কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও হিসাবরক্ষক হারুন বেশিরভাগ সময় অফিস করে থাকেন একা। রাতে অফিসের ভিরতে থাকেন ওই অফিসের পাম্প চালক মো. হাফিজুল ইসলাম। অফিসের নাইট গার্ডের পোস্ট খালি থাকায় হাফিজুল ইসলাম নাইট গার্ড ও পাম্প চালকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অফিসের দাপ্তরিক কাগজপত্র রাখা একটি রুমে তার বালিশ কাথাও চোখে পড়েছে। ওই অফিসে কোন দারোয়ান নেই। নেই কোন কম্পিউটার অপরেটর বা ক্লার্ক কাম টাইপিস্ট (সিসিটি)। এসব বিষয় নিয়ে টেলিফোনে বিস্তারিত কথা হয় ফরিদপুর বিসিক-এর শিল্পনগরী কর্মকর্তা মাইনুল হাসানের সাথে।

তিনি জানান, আমি বেশিরভাগ ফরিদপুর অফিসেই অফিস করি। কানাইপুর শিল্প নগরীতে মাঝে মাঝে গিয়ে বসি। আর দুই জন ডেইলি মজুরিতে কাজ করা কর্মচারী ছিলো তারা ছুটিতে আছে। কানাইপুর বিসিকে নাইটগার্ড, পিয়ন ও সিসিটি (ক্লার্ক কাম টাইপিস্ট) পদে কোন লোক নাই। শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হলে এই সমস্যা থাকবে না। এসব শূন্য পদে কবে নাগাদ নিয়োগ দেয়া হবে তাও জানেন না কেউ।

শিল্পনগরী কর্মকর্তা মাইনুল হাসান আরও জানান, 'ফরিদপুরের নগরকান্দার জয় বাংলা মোড় পার হয়ে ভাঙ্গার দিকে আসতে মেঘাড়কান্দি একালায় ৫০ একর জায়গা রয়েছে বিসিকের। পদ্মা সেতু দিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগের সুবিসার্ধে ও পায়রা বন্দর কাছে হওয়ায় ওইখানে একটি বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার প্রস্তাবনা শিল্প মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। ওইটি গড়ে উঠলে ওইখানে হয়তো শুধু ডালের মিল নয়, বরং বিভিন্ন ধরণের শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে।

ফরিদপুরের কানাইপুরে অবস্থিত শিল্প নগরী বিসিকে মোট ৪৩ টি শিল্প কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ৩৩টিই ডালের মিল। ওই শিল্প নগরীতে মামলা জটিলতার কারণে কয়েকটি মিল বন্ধ রয়েছে। বাকী গুলো ফার্নিচার, প্লাস্টিক, ক্যামিক্যাল ইত্যাদি পণ্যের ফ্যাক্টরি।

এদিকে, বিসিকে নিপা প্লাস্টিক নামের একটি প্লাস্টিকের বদনা তৈরী করা ফ্যাক্টরীটি এখন ভাঙারি প্লাস্টিক পণ্য কেটে বস্তা ভরে বিক্রি করে। ওই ফ্যাক্টরির সামনে বিসিকের রাস্তার অর্ধেকের বেশি অংশ বন জঙ্গলে ভরা। রাসেলস ভাইপার সাপের ভয়ে ওই রোডে কেউ চলাচল করে না। ওই রোডের শেষের মিল দুটো বন্ধ থাকায় নিপা প্লাস্টিক ফ্যাক্টরির বড় বড় বস্তা সাজিয়ে রেখেছে রাস্তাটিতে।

এ বিষয়ে নিপা প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিটির মালিক মো. সিরাজুল ইসলাম মিয়াকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ডিজিএম ও ডিসি স্যার এসব জানে। আমাদের সমস্যা হলে আমাদের সমিতি প্রদীপ দা দেখে'। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বদনা না বানালেও আমি প্লাস্টিকেই আছি, আমার কাগজপত্রেরও সমস্যা নাই। এগুলো প্লাসটিক ভাঙারি না, ভাঙারি প্লাস্টিক আমি কিনে কেটে বস্তা ভরে বিক্রি করি। রোডে বন জঙ্গলে ভরে আছে, এখানে কেউ চলাচল করে না। তাই মামামাল রেখেছি। পরে ট্রাক এসে এগুলো নিয়ে যাবে।

(আরআর/এএস/জুন ২৬, ২০২৪)