রূপক মুখার্জি, নড়াইল : লোহাগড়ায় ভাঙ্গারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চলছে চোরাই মালের জমজমাট বাণিজ্য। এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর। এসব ব্যবসার ওপর নজরদারি নেই প্রশাসনের। ফলে ফুলে-ফেঁপে ওঠছে এসব ভাঙ্গাড়ী ব্যবসায়ীরা। 

এসব ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের লালিত-পালিত চোরেরা রাতের আঁধারে গ্যাসের রাইজার, বাড়ি ও বাসা বাড়ির বৈদ্যুতিক সার্ভিস লাইনের তার, বাড়ির পানির টিউবওয়েল, টিউবওয়ের মাথা-হাতল, বাড়ির আওতার টিন, বাড়ি নির্মাণ সামগ্রী ও বাড়ির সামনে থাকা পরিত্যক্ত আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।

প্রকাশ্যে ব্যবসার নামে ভাঙ্গারির দোকান গুলোতে এইসব চোরাই মাল কেটে টুকরা টুকরা করে অন্যসব সরঞ্জামের সাথে মিশিয়ে রাখা হয়। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ চোরাই মালামাল বিক্রি হচ্ছে লোহাগড়ার ভাঙ্গাড়ী দোকান গুলোতে। অথচ, ব্যবসার নামে এসব অপকর্ম দেখার মতো কোন কর্তৃপক্ষ আছে বলে মনে হয় না!

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, লোহাগড়া পৌর শহরের আনাচে কানাচে, ওলি-গলিতে গড়ে উঠেছে ভাঙ্গাড়ী মালামাল কেনা-বেচার দোকান। এইসব ভাঙ্গারি দোকানিদের সহযোগিতা ও দাদনের টাকা নিয়ে এলাকা ভিত্তিক গড়ে উঠেছে একাধিক ছোট-বড় চোরের দল। এসব চোরের দল মাদকাসক্ত। মূলত: এখানকার মাদকসেবীদের বড় একটি অংশ চুরির সাথে জড়িত বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তারা সুবিধামতো সময়ে বাড়ি ও বাসাবাড়ি থেকে মালামাল চুরি করে ভাঙ্গাড়ী দোকানে বিক্রি করে থাকে। দিনে-দুপুরে এসব চোরাই মালামাল বেচাকেনা হলেও প্রশাসন রহস্যজনক কারনে ভাঙ্গাড়ি ব্যবসা বন্ধে কোন ব্যবস্হা গ্রহণ করছে না। এতে করে, সাধারণ মানুষের মধ্যে দিনদিন বাড়ছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।

এই চোরের দলগুলো বিভিন্ন এলাকা থেকে লোহার যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক মোটর, তার, দরজা-জানলার গ্রীল, টিউবওয়েল, টিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করে দোকানিদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে।

এছাড়া বাড়ি-ঘর ও বিভিন্ন কারখানা সংস্কার কাজের জন্য রাখা রড, তারসহ লোহা দ্রব্যাদি ও চুরি হয়ে যাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী বলেন, চুরির মাল ছাড়া প্রকৃত ভাঙ্গাড়ী ব্যবসা করা খুবই কঠিন। আর সকলকেই ম্যানেজ করেই চলে এই ভাঙ্গাড়ী ব্যবসা।

তিনি আরও জানান, একেকজন ভাঙ্গাড়ী ব্যবসায়ীর অধীনে ৫/৬ জন ফেরি ব্যবসায়ী থাকেন এবং বেশ কিছু চোরও দাদন দিয়ে লালন পালন করে থাকেন। তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কিছু নিত্যপণ্যের বিনিময়ে ব্যবহার অনুপযোগী কিংবা পরিত্যক্ত জিনিষপত্র সংগ্রহ করে আমাদের কাছে বিক্রি করে থাকেন।

এই বিষয়ে লোহাগড়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম হায়াতুজ্জামান বলেন, 'কিছু মাদকসেবী বাড়ি থেকে যখন নেশার টাকা যোগাড় করতে পারে না, তখন বিভিন্ন জায়গায় চুরি করে। আর চুরি করা মালামাল ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

লক্ষ্মীপাশা সংগীত একাডেমীর সভাপতি বিএম লিয়াকত হোসেন বলেন, লোহাগড়া ও লক্ষ্মীপাশাসহ আশেপাশের এলাকায় অনেক ভাঙ্গারির দোকান গড়ে উঠেছে। আর এইসব ভাঙ্গারির দোকানের মালিকদের সাথে অসংখ্য চোরের সখ্যতা রয়েছে। কারণ চোরাই মাল কম দামে কিনতে পারে বলে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের একটি লাভের অংশই আসে এইসব চোরাই মাল থেকে। তাই তারা চোরাকারবারীদের সাথে সম্পর্ক রাখে।

লোহাগড়া পৌরসভার লাইসেন্স ইন্সপেক্টর মো. তৌফিক আহমদ জিনিয়াস বলেন, 'আমাদের নিয়ম অনুযায়ী ভাঙ্গারির দোকানের নামে কোনো ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয় না। পুরাতন মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের লাইসেন্স দেওয়া হয়।

এই বিষয়ে লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাঞ্চন রায় বলেন, 'যাদের বাড়িতে চুরি হয়েছে, তারা যদি থানায় অভিযোগ করে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়া চুরির মালামাল একশ্রেণির ভাঙ্গারির দোকানদার গোপনে ক্রয়-বিক্রয় করছে। তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাঙ্গারি দোকানগুলো নজরদারিতে আছে, যে কোনো সময় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

এ দিকে সাধারণ মানুষ মনে করেন, প্রতিনিয়ত এই উপজেলায় ক্রমাগত বেড়ে চলেছে ভাঙ্গারি ব্যবসা। যার কারণে বাড়ছে চুরির সংখ্যা। তাই এসব দোকানে প্রশাসনের দ্রুত নজরদারী আনা উচিত বলে মনে করেন তারা।

(আরএম/এসপি/জুন ২৬, ২০২৪)