সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে আদালতের নির্দেশে দেড়মাস পর সমাধি থেকে উত্তোলন করা হয়েছে নয়ন বিশ্বাস (১৬) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীর লাশ। মঙ্গলবার (২৫ জুন) সালথা উপজেলার মাঠ সালথা গ্রামের সমাধি থেকে লাশটি উত্তোলন করা হয়। মৃতদেহটি ওই গ্রামের ধনঞ্জয় বিশ্বাস ও লক্ষী রানী দাস দম্পত্তির ছোট পুত্রের। সে পাশ্ববর্তী যোগারদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল।

ছেলের লাশ উত্তোলন দেখে আহাজারি করতে করতে বার বার মূর্ছা যান মা লক্ষী রানী দাস। এ সময় তার পাশে বাবাকে স্তব্দ হয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের অভিযোগ, ছোট ভাইয়ের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে ছেলেকে।

মৃতের বাবা ধনঞ্জয় বিশ্বাস জানায়, তাদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল আপন ছোট ভাই পরিমল বিশ্বাসের সাথে। এর সুত্র ধরে গত ০৯ মে পরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে পরিমল বিশ্বাসের মেয়ের জামাই জেলা সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের পারচর গ্রামের বাসিন্দা আশিষ মন্ডলের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন জানতে পারে, তার ছেলে ওই গ্রামে একটি পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে মারা গেছে। পরে তার লাশটি এনে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সমাধি দেয়া হয়।

এরপর পরিবারের সন্দেহ হলে এক মাস পর গত ২ জুন পরিমল বিশ্বাস ও তার ছেলে প্রষোনজিত বিশ্বাস, মেয়ে জামাতা আশিষ মন্ডল এবং পারচর গ্রামের সুমন বিশ্বাসকে আসামী করে ফরিদপুর আদালতে নয়নের মা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ৭ জুন ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় রুজু হয়। পরে রহস্য উদঘাটন ও ময়না তদন্ত করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত গ্রহনের জন্য আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক শামীম হাসান। এরপর আদালতের আদেশে আজ লাশটি উত্তোলন করা হয়। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিছুর রহমান বালি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শামীম হাসান।

লাশ উত্তোলেন সময় আহাজারি করতে থাকেন তার মা লক্ষী রানী দাস৷ তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার দেবর তার মেয়ের বাড়িতে অনুষ্ঠানের কথা বলে নিয়ে যেতে চায়। তখন আমি নিষেধ করেছিলাম। তারপরও আমার ছেলেকে পরিমলের ছেলে কৌশলে নিয়ে যায়। পরেরদিন গোসল করার নামে তাকে পারচর গ্রামের একটি লিচু বাগানের পাশে নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। এ সময় তারা আমার ছেলেকে মারধর করে এবং পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলেছে। কিন্তু আমাদের জানিয়েছিল, পানিতে ডুবে মারা গেছে। ওরা হাসপাতালেও নেয়নি।এরপর খবর পেয়ে আমার স্বামী ওর লাশটি নিয়ে আশে। তখন আমরা শোকাহত থাকায় কিছু বুঝতে পারিনি। লাশটি বাড়িতে এনে দেখি, ওর মুখে ও গলায় আঘাত রয়েছে। তখন আমরা মামলা করতে চাইলে হুমকি-ধমকি দেয়া হয় এবং বাঁধা সৃষ্টি করে। এরপর আমি আদালতে মামলা করেছি।

তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি এই হত্যার বিচার চাই, ওগো ফাঁসি চাই। না হলে, ওরা আমার আরেক ছেলেকেও মেরে ফেলবে।

এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা শামীম হাসান বলেন, প্রথমে তার বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশটি হস্তান্তর করি। এরপর তার মা বিজ্ঞ আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করে। আজ আদালতের আদেশে লাশটি উত্তোলন করা হয়েছে এবং ময়না তদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এএনএইচ/এএস/জুন ২৬, ২০২৪)