বিশেষ প্রতিনিধি : পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে রাজবাড়ীর সাগর এগ্রো ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজের স্বত্তাধিকারী হাজী মোঃ দেলোয়ার হোসেনের বাসভবনে পবিত্র রমজান মাসে যাকাতের অর্থ এবং শাড়ী ও লুঙ্গি বিতরণকালে অবহেলায় ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধার মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের নীরিহ ৬ কর্মচারী আইনের মুখোমুখি হলেও রহস্যজনক কারণে যাকাত বিতরণের মূল আয়োজক ব্যবসায়ী হাজী দেলোয়ার হোসেন সম্পূর্ণভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।

জানা গেছে, গত ৭ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে রাজবাড়ীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মোঃ দেলেয়ার হোসেন নিজ বাসভবনে যাকাতের অর্থ এবং শাড়ী ও লুঙ্গি বিতরণের আয়োজন করে। এতে প্রায় ৩ হাজার অসহায় ও দরিদ্র নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। অথচ কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ না করেই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করায় সাড়ে ৭ টার দিকে প্রচন্ড ভীড়ের চাপে ভানু খাতুন (৬৫) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় রাজবাড়ী থানার এসআই (নিঃ) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে রাজবাড়ী থানায় সাগর এগ্রো ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজের ম্যানেজার, ২ জন সহকারী ম্যানেজার , সেলস ম্যানেজার, দারোয়ান ও ডেলিভারী ম্যান সহ ৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা (নং-১৫, জিআর-১৫৩/২৪ ধারা-১৮৬০ সালের দন্ডবিধি আইনের ৩০৪ এর ক) দায়ের করে। অথচ অবহেলাজনিত মৃত্যুর ঘটনার মূল হোতা ও একমাত্র দায়ী ব্যবসায়ী হাজী মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে ওই মামলা থেকে রহস্যজনক কারণে বাদ রাখা হয়। যদিও মামলায় অভিযুক্ত সাগর এগ্রো ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজের ৬ কর্মচারীকে ঘটনার রাতেই রাজবাড়ী থানা পুলিশ গ্রেফতার করে।

এক দিনের হাজত বাসের পর তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। এ মামলায় অভিযুক্তরা হল সাগর এগ্রো ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজের ম্যানেজার মোঃ শাহাবুদ্দিন মোল্লা (৫২), সহকারী ম্যানেজার জুয়েল মল্লিক (২৭) ও জসিম কবির দুলু (৪২), আপন ভাগ্নে সেলস ম্যানেজার মোঃ জাকির হোসেন (৫৫), ডেলিভারীম্যান রানা মৃধা (২২) ও দারোয়ান মোঃ জিসান শেখ (২১)।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় মূল দায়ী ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে মামলা দায়েরের বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হলে পুলিশ বিভাগ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশন দায়েরের প্রস্ততি গ্রহণ করলেও শেষ পর্যন্ত তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ব্যবসায়ী হাজী দেলোয়ার মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জোর তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে মৃতক ভানু খাতুনের ৫ পুত্র ও ৩ কন্যাকে দিয়ে একটি অঙ্গীকারনামা প্রস্তত করে আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এতে মৃতক দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, শ্বাস কষ্ট ও হার্টের সমস্যায় ভূঁগছিল বলে উল্লেখ করা হয়।

সচেতন মহলের দাবি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ তদন্ত হলে বৃদ্ধা ভানু খাতুনের হত্যার ঘটনায় থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে এবং মূল অপরাধী আইনের মুখোমুখি হবে।

(একে/এএস/জুন ২৫, ২০২৪)