ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : পদ্মা নদী তীরবর্তী ঈশ্বরদীর চরাঞ্চল জুড়ে রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছরই ঈশ্বরদীতে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে দুই-একজন মারা যাচ্ছে। পদ্মার চর এলাকার কৃষক ও কলাচাষিরা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে। চরের ফসলি জমিতে এখন কৃষকরা গামবুট পায়ে দিয়ে চলাফেরা ও চাষাবাদ করছে। এরপরও মন থেকে রাসেল ভাইপার সাপের আতঙ্ক যাচ্ছে না।

গত ৩১ মে পদ্মা তীরবর্তী দাদাপুরে চরের কলাবাগানে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে দীঘা গ্রামের হাফিজুর রহমান (৪৫) নামে এক কলাচাষির মৃত্যু হয় এরপর থেকে চর জুড়ে রাসেল ভাইপারা সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা যায়, বিগত পাঁচ বছর ধরে ঈশ্বরদীতে রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। ইতোপূর্বে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে পাকশী, দাদাপুর, সাঁড়া, মাজদিয়া, আরামবাড়িয়া এলাকায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। চরকুড়লিয়া গ্রামের কলাচাষি আব্দুর রহমান বলেন, চরের কলাবাগানে রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব ব্যাপকহারে বেড়েছে। কলাবাগানে গামবুট পায়ে দিয়ে কাজ করলেও মনের মধ্যে সবসময় এই সাপের আতঙ্ক কাজ করে। এই সাপ কামড়ে দিলে প্রতিষেধক যেন সহজে পাওয়া যায় এ বিষয়টি অবশ্যই হাসপাতাল কর্তৃপকে নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া এ সাপের ভয়ে দিনমজুররা চরের কলাবাগান ও ফসলি জমিতে কাজে আসবে না।

কামালপুর চরের কলাচাষি কামাল হোসেন বলেন, মনে ভয় নিয়ে কলাবাগানে কাজ করি। বাগানে পড়ে থাকা পাতার নিচে থেকে সাপ বের হয়ে ছোবল দেয়ার চেষ্টা করে। গত কয়েকদিনে এখানে ৬টি সাপ মারা হয়েছে। শুনেছি এগুলো খুব বিষাক্ত। কামড় দিলে মানুষ বাঁচে না। সাপের কামড়ের আতঙ্কে কৃষি শ্রমিকরা এখানে কাজ করতে যায় না। খুবই সমস্যার মধ্যে আছি। ডিগ্রীচরের কলা বাগানের শ্রমিক হারুনর রশীদ বলেন, সাপের ভয়ে গামবুট পড়ে কাজ করি। মাঝেমধ্যে কলাবাগানে রাসেল ভাইপার সাপ দেখা যায়।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ শফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, এ পর্যন্ত যারা রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সবার বাড়ি পদ্মা তীরবর্তী এলাকাতে। রাসেল ভাইপার খুবই ভয়ঙ্কর। এটি কামড় দেয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, পদ্মা নদীর তীরবর্তী ঈশ্বরদী উপজেলা। বিগত কয়েকবছর ধরে পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় যেসকল কৃষক ভাইয়েরা রয়েছেন তাদের প্রতি পরামর্শ, তারা কৃষি জমিতে যাওয়ার সময় অবশ্যই হাতে লাঠি রাখেন এবং পায়ে গামবুট পড়েন। এরপরও কোন কৃষক সাপের দংশনের শিকার হলে দ্রæত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং প্রতিষেধক দিতে হবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ আব্দুল বাতেন বলেন, চরাঞ্চলে রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। এ সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের জন্য অবশ্যই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সীমিত আকারে এন্টিভেনম রাখা হয়েছে। সাপের কামড়ে আক্রান্ত কোন রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে অবশ্যই চিকিৎসা দেয়া হবে।

(এসকেকে/এসপি/জুন ২১, ২০২৪)