গোপাল নাথ বাবুল


প্রায় চারশ’ বছর ধরে একই জায়গায় বসবাস করে আসা রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্গত বংশালের মিরনজিল্লা কলোনীর হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষদের উচ্ছেদ করছে সরকার। সরকারের লক্ষ্য-বাণিজ্যিক বিস্তার। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে হরিজন সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ-সহ ধর্মীয় অবমাননার নামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এসব ঘটনাকে প্রতিহত করতে বাংলাদেশের প্রায় সব ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে সরকারের একাধিক কমিটি থাকলেও কমিটিগুলোর তৎপরতা খুব বেশি লক্ষ্য করা যায় না। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরাই বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটালেও এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ করার মত কেউ নেই। অকাজের কাজী ও সুযোগ সন্ধানী সুশীল সমাজ এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। আর এখন তো দেশে বুদ্ধিজীবী বলতে কেউ আছে কিনা ঠাহর করা যায় না। বিভিন্ন সময়ে হরিজন সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ-সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, দেশে আইন কেউ মানছে না বরং নিজেদের মতো করে আইনকে সবাই ব্যবহার করছে। এছাড়া প্রতিটি ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেছে সাম্প্রদায়িক চিন্তা, চেতনা ও মনোভাব, যা কোনভাবেই কাম্য নয়।  

ঢাকার বংশালের মিরনজিল্লা কলোনির হরিজন সম্প্রদায়ের উচ্ছেদের ঘটনা এবং তাদের ওপর নির্যাতন নতুন কিছু নয়। ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বগুড়া রানী নগরে প্রকৌশলী চৈতন্য ও ফরিদপুরে হরিজন সম্প্রদায়ের ২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৯ সালে রেলের জমি সম্প্রসারণের জন্য গোপীবাগ টিটিপাড়াতে একইভাবে হরিজনদের প্রায় শতাধিক ঘর উচ্ছেদ করা হয়েছিল। বিগত ৫ বছরেও তাদের পুনর্বাসন করা হয়নি। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বরে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে এশিয়া হোটেলে মিঠুন বাঁশফোর (২৩) নামের এক যুবক বিরিয়ানি কিনতে গেলে হোটেল কর্মচারী মাসুদ রানার সাথে সামান্য কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে গরম তেল দিয়ে মিঠুনের হাত ঝলসে দেয়। পরে পুলিশ এসে মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করলেও কয়েকদিন পর সে জামিনে মুক্তি পায়। তাদের মেয়েরা ধর্ষিত হলে কোনও বিচার পান না। সংখ্যালঘুদের ওপর প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটে চললেও প্রশাসন বরাবরই উদাসীন। ফলে বিভিন্ন সময়ে হরিজন সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ-সহ সারাদেশে ধর্মীয় অবমাননার নামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।

অথচ মুক্তিযুদ্ধে হরিজনদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও তারা পাননি কোনও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট কিংবা কোনও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা অথবা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এ দেশের স্বাধীনতার জন্য ১০ জন হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁরা হলেন, যথাক্রমে মহাবীর লাল সামুন্দ, নান্দু লাল, আনোয়ার লাল, ঈশ্বর লাল, খালবাল দাস, ঘাশিটা দাস, শংকর দাস হেলা, নান্দা লাল, লালু দাস, রামচরন ইত্যাদি। তাঁরা ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর বর্বর পাক হানাদারদের হাতে শহীদ হন। ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং সমতাপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। তা আদৌ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি না, সরকার ও রাষ্ট্রের কাছে তার জবাব আশা করতে পারি। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা রীতিমত স্পর্ধার বিষয়। কারণ একজন সংখ্যালঘু হিসেবে সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি। কোন কথাটি বলব আর কোন কথাটি বলব না কিংবা কোন শব্দটি লিখব আর কোন শব্দটি লিখব না, তা গভীরভাবে চিন্তা করেই তারপর কলম ধরতে হয়। কোন সময় আবার সরকার ডিজিটাল আইন প্রয়োগ করে জেলে ভরে দেয় এমন ভয় সবসময় তাড়া করে।

হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষগুলো মূলত জাত সুইপার এবং অবাঙালি দলিত শ্রেণি। এদের তথাকথিত উচু বর্ণের মানুষরা ঘৃণাভরে মেথর, সুইপার, অস্পৃশ্য বলে ডাকে। পুনা চুক্তির পর হরিজন শব্দটি তথাকথিত অস্পৃশ্য বা অবর্ণ হিন্দুদের সমষ্টিগতভাবে নামকরণ করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। গান্ধীজি আবার শব্দটি নিয়েছিলেন এক পত্রলেখকের কাছ থেকে। পত্রলেখক গুজরাটের কবিসন্ত ‘হরিজন’ শব্দটি প্রথম ভিন্ন প্রসঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন। বিশ শতকের প্রথমদিকে নিষ্পেষিত অস্পৃশ্য হিন্দুদের জন্য স্বতন্ত্র নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ড. ভিমরাও রামজি আম্বেদকর। এ আন্দোলনকে মান্যতা দিতে গিয়ে ১৯৩০ সালে বৃটিশ সরকার ঘোষিত সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ অনুযায়ী অস্পৃশ্য হিন্দুদের জন্য স্বতন্ত্র নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলে মহাত্মা গান্ধী এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অনশন শুরু করেন। অবশেষে স্বতন্ত্র নির্বাচনের পরিবর্তে আসন সংরক্ষণের নীতিকে বর্ণ হিন্দু ও অবর্ণ হিন্দুদের মধ্যে পুনা চুক্তির মাধ্যমে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়েছিল। এ চুক্তির পর অবর্ণ হিন্দুদের সরকারি মতে নামকরণ হয়েছিল তপসিল জাতি। আর মেথর, সুইপার, অচ্ছুৎ-অস্পৃশ্য এসব ঘৃণিত নাম থেকে এ সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য মহাত্মা গান্ধী তাদের নাম দেন ‘হরিজন’ (ঈশ্বরের সন্তান)।

বৃটিশ শাসনামলের মাঝামাঝি সময়ে এদের পূর্ব পুরুষদের ভারতের বিভিন্ন রাজ্য অর্থাৎ উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, উড়িষ্যা, কুচবিহার, রাচি, মাদ্রাজ ও আসাম থেকে পূর্ববঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মী, চা-বাগানের শ্রমিক, জঙ্গল কাটা, পয়ঃনিষ্কাশন প্রভৃতি কাজের জন্য তৎকালীন বৃটিশ সরকার নিয়ে এসেছিল। তখন থেকেই মূলত এরা বংশ পরম্পরায় শুধু শারীরিক, মানসিক, সামাজিকভাবেই নির্যাতীত, নিগৃহীত হচ্ছেন না, এরা পারশ্রমিকের বেলায়ও বৈসাম্যের শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক শ্রমমূল্য মাত্র ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা মাত্র। ভূমিহীন ও নিজস্ব বসতভিটেহীন এসব সম্প্রদায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জমি, রেলস্টেশন-সহ সরকারি খাস জমিতে বসবাস করে আসছেন। সারাদেশে বিভিন্ন কলোনী ও বস্তিতে অবস্থানরত এ সম্প্রদায়গুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ খাবার পানির প্রচুর সঙ্কট রয়েছে। পানি সরবরাহের কলগুলো প্রায় অকেজো থাকে। তাদের বাধ্য হয়ে পানীয় ও স্নানের জন্য দূষিত পুকুরের পানি ব্যবহার করতে হয়। ফলে তারা বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় এবং তাদের শিশুরা প্রায় পুষ্টিহীনতায় ভোগে এবং অন্য এলাকা থেকে হরিজন কলোনির শিশুমৃত্যু হার বেশি।

অথচ আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় এসেও এ সম্প্রদায়ের মানুষ অনেক অনেক পিছিয়ে। রাষ্ট্র্ও তাদের মূল্যায়নের পরিবর্তে প্রতিনিয়ত অবমূল্যায়ন করে যাচ্ছে। তাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিতে সরকারের ভূমিকা খুবই নগণ্য। তাদের প্রতি সমাজের জনগোষ্ঠির দৃষ্টিভঙ্গি মোটেই বদলায়নি। এ সভ্যযুগে এসেও সমাজ তাদের কাজকে নিচু এবং মানুষগুলোকে অস্পৃশ্য-অচ্ছুৎ মনে করে। অথচ এ হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষগুলোই মূলত আমাদের সমাজ পরিষ্কার রাখে। প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে ওঠে এ যুগের তথাকথিত সভ্য মানুষগুলো যাতে সুন্দর চকচকে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেন।
বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ কর্তৃক প্রচারিত লিফলেট অনুযায়ী বাংলাদেশে পরিচ্ছন্ন পেশায় নিয়োজিত বাঁশফোর, হেলা, লালবেগী, ডোমার, রাউত, হাঁড়ি, ডোম (মাঘাইয়া) ও বাল্মিকী এ ৮ জাতের জনগোষ্ঠী নিজেদের হরিজন দাবি করেন। আর অন্য জনগোষ্ঠীর হরিজনরা ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরি বা অন্য কাজ করেন। ২০১৩ সালে মাযহারুল ইসলাম এবং আলতাফ পারভেজের গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বসবাসরত বর্তমানে হরিজনদের সংখ্যা বর্তমানে সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় মিলিয়নের মতো।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, মিরনজিল্লার পল্লীতে বর্তমানে প্রায় ৯০০টি পরিবারের ৮ হাজারেরও বেশি হরিজন সম্প্রদায়ের লোক বাস করেন। ২০১৬ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিতে আধুনিক কাঁচাবাজার ও বহুতল ভবন নির্মাণ করে কাঁচাবাজার ও বহুতল ভবনের মধ্যে একটি বাণিজ্য স্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এটা জানার পর হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা তৎকালীন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তারা কোন অবস্থায় আছে, তা দেখার জন্য আবেদন জানান। প্রতিমন্ত্রী তখনকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে পুনর্বাসন ছাড়া হরিজন সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ না করার জন্য একটি ডিও লেটার দেন। শুধু তাই নয়, বাসিন্দারা সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানকেও একটি স্মারকলিপি দিয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন, তাদের যেন উচ্ছেদ করা না হয়। কারণ তারা জাত সুইপার বলে তাদের কেউ ঘরভাড়া দেন না। তাদের সন্তানদের কোনো স্কুলে ভর্তি করে না। অতএব, তাদের যেন তাদের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করা না হয়।

এমন আবেদনে পরিকল্পনা মন্ত্রীও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে বলেছিলেন, পুনর্বাসন ছাড়া যেন তাদের উচ্ছেদ করা না হয়। এত আবেদন-নিবেদনের পরেও মাত্র ১২ ঘন্টার নোটিশে হঠাৎ ২টি বুলডোজার গিয়ে তাদের বেশকিছু ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দেয়। এতে নিমিষেই শত শত বছরের সম্পর্কের স্পর্শ এমনকি তাদের মন্দির থেকেও উচ্ছেদভীতিতে বাসিন্দারা আতংকিত হয়ে পড়েন। আর আতঙ্কের ফল দাঁড়ায় ৪ জনের স্ট্রোক এবং ২ জন আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্যে জনসম্মুখে ফাঁসি দিতে গেলে বস্তির বাসিন্দারা তাদের বাঁচান এবং ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করান। স্ট্রোক করা ৪ জনের মধ্যে লক্ষ্মী রানী এবং ৫৫ বছরের পবনলাল নামের মোট ২জন মারা যান। শত শত বছর ধরে যেখানে হরিজন সম্প্রদায়ের বসবাস, সেখানে উন্নয়নের ঠেলায় বহুতল মার্কেট নির্মাণের নামে গাদাগাদি করে থাকার শেষ আশ্রয়টুক্ওু নিমিষেই শেষ করে দেয়া হল! লক্ষ্মী রানী ও পবনলাল, এ ২ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হল উন্নয়নে মহাসড়কে চলা ২টি বুলডোজার চালিয়ে। এর জবাব কি আমাদের অসম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুুদ্ধের পক্ষের শক্তির দাবিদার বলে অহংকার করা সরকার বাহাদুর দিতে পারবে ? আর যারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য ফাঁসিতে ঝুলতে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তারা কি পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন? কেননা, প্রতিটি উচ্ছেদের ঘটনায় মানসিক স্বাস্থ্যের এক ভয়ঙ্কর রূপ সামনে আসে। কখনও উচ্চ রক্তচাপ, ট্রমা, কখনও স্ট্রোক, উদ্বিগ্নতা এবং শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা। তাই উচ্ছেদ কেবল একটি সম্প্রদায়কে আশ্রয়হীনই করে না, বরং তাদের এক দীর্ঘ মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে দেয়। ফলে তারা আঘাত পেতে পেতে পাল্টা আঘাত করতে দ্বিধা করে না।

দলিত গবেষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হরিজনরা শোষিত দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। সমাজ এবং সভ্যতা থেকে এদের অবস্থান বহুদূরে। দীর্ঘকাল ধরেই এদের জীবন, ভাষা, সংস্কৃতির যে অধিকার, সে অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। এই মানুষগুলো যুগ যুগ ধরে নির্যাতন ও অবহেলার শিকার। অথচ যারা আমাদের সভ্যতাকে পরিচ্ছন্ন রেখেছে, প্রতিদিন সকালে যারা নতুন সভ্যতার জন্ম দেয়, সেই মানুষগুলোই বৃটিশ শাসনকাল থেকে আজ পর্যন্ত একই অবস্থায় আছে।’

আন্তর্জাতিক দলিত সংহতি নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক রিকি নহরিল্যান্ড বলেন, ‘সারাজীবন অবহেলিত হতে হতে তাদের মানসিকতা এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কেউ একবার আঘাত করলে তারা পাল্টা আঘাত করার জন্য প্রস্তুত থাকে।’

সুতরাং হরিজন পল্লী বাংলাদেশের বাইরের কোনও এলাকা নয়। হরিজনরাও আমাদের সংস্কৃতির অংশ। তারা একদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ থেকে বিরত থাকলে ঢাকা-চট্টগ্রামের মত নগরের বাসিন্দাদের হাসপাতালে দৌঁড়াতে হবে। তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্রের ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টানো অতীব জরুরী। তারা এমন অন্যায় উচ্ছেদের বিরুদ্ধে একটি অহিংস আন্দোলন গড়ে তোলেছে এবং এদেশের সুশীল সমাজ-সহ সরকারের প্রতি আকুল আবেদন ও করুণ আর্তি জানাচ্ছেন, বারে বারে মরি তবু বাঁচিবারে চাই। তাদের পাশে আমি, আপনি সবার দাঁড়ানো উচিত এবং পুনর্বাসন না করে তাদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা সময়ের দাবি। গত ১৩ জুন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে হরিজন সম্প্রদায়ের উচ্ছেদের প্রতিবাদে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ-সহ সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে প্রশাসনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা অপরাধ দমনে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠ বিচার নিশ্চিত এবং মানবাধিকারের দর্শন প্রতিষ্ঠিত করে দেশ পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে। আসুন, আমরাও তাদের এ ন্যায্য আন্দোলনে সামিল হই।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।