মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ ফি দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টিকে বন ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মঙ্গলজনক বলে এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা।

তাঁদের মতে, প্রবেশ ফি বাড়ানোর কারণে এখন থেকে কেউ অযথা প্রবেশ করে হৈহুল্লুর বা বন্যপ্রাণীদের বিরক্ত করবে না। তবে কতৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থী সহ স্থানীয় পর্যটকরা।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্র জানায়, লাউয়াছড়ায় প্রবেশ ফি দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বেড়েছে। চলতি বছরের ১৩ জুন লাউয়াছড়ার টিকেট কাউন্টারের কালেক্টরের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ৯টি বিষয়ে নতুন করে নির্ধারিত টাকা প্রবেশ ফি নেওয়ার নির্দেশনা দেয় বন বিভাগ।

আগে লাউয়াছড়ায় প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রবেশ ফি ছিল ৫০ টাকা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫ টাকা। অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশ ফি ২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। জাতীয় উদ্যানটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে আগে বিদেশি পর্যটকদের গুনতে হতো ৫০০ টাকা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকায়। এ ছাড়া শুটিংয়ের জন্য প্রবেশ ৬ হাজার ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩ হাজার ৮০০ টাকা করা হয়। পিকনিক পার্টির জন্য জনপ্রতি ১১ টাকা নেওয়া হলেও নতুন সূচিতে এখন তা হয়েছে ২৩ টাকা। পার্কিংয়ের জন্য ছোট গাড়ির ফি ছিল ২৭ টাকা; এখন সেটা বেড়ে ১১৫ টাকা এবং বড় গাড়ি ফি ১০৫ থেকে বেড়ে ২৩০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ঈদের ছুটিতে শ্রীমঙ্গল ঘুরতে যান তাপস বড়ুয়া নামের এক দর্শনার্থী। তিনি বলেন, ‘পরিবারের ৭ সদস্য নিয়ে শ্রীমঙ্গল এসেছি। আজ সকালে লাউয়াছড়ায় গেট থেকে ফিরে এলাম। লাউয়াছড়ায় প্রবেশ করতে প্রায় ৮০০ টাকার টিকিট কাটতে হচ্ছে। পরে আর ভেতরে প্রবেশ করিনি।

লাউয়াছড়া উদ্যানের ট্যুরিষ্ট গাইড শাহীন মিয়া বলেন, টিকিটের দাম বাড়ার কারণে অনেকেই গেট থেকে ছবি তুলে চলে যাচ্ছেন। গেটের সামনে তাই ভিড় বেশি থাকে।

বিষয়টি নিয়ে পরিবেশকর্মী মো. সালাউদ্দিন বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ ফি বাড়ানোর বিষয়টি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। এখানে প্রবেশ ফি বাড়ানোর কারণে পর্যটক কম ঢুকবেন। আমরা প্রায়ই দেখি, পর্যটকেরা লাউয়াছড়ায় ঢুকে প্রাণীদের উত্ত্যক্ত করেন, যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলেন। হইহুল্লোড় করেন। এতে প্রাণীরা সমস্যায় পড়ে।

তিনি আরো বলেন, আমরা বন বিভাগের কাছে দাবি জানিয়েছি, যেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে পর্যটক ঢুকতে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বছরের যে সময়ে প্রাণীদের প্রজনন মৌসুম, সেই সময়ে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ রাখা উচিত। এতে এখানকার প্রাণীরা টিকে থাকবে।

মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছরের ২২ মে তারিখে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপন আমাদের হস্তগত হয়েছে। সেখানে দেখা যায় চলতি বছরের ২১ মার্চ থেকে বন অধিদপ্তরের আওয়াধীন জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, পার্ক/ ইকোপার্কের ফ্রি বৃদ্ধি করা হয়। সে লক্ষে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া, হবিগঞ্জের সাতছড়ি, শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্কসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকা বনগুলোতে প্রবেশ ফি বাড়িয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।’

লাউয়াছড়ায় প্রবেশ ফি বাড়ানোর ফলে এখন থেকে পর্যটক কিছুটা কম প্রবেশ করবে। আর এটি সার্বিক বিবেচনায় বন্যপ্রাণীদের জন্য মঙ্গলজনক বলে জানান এই বন কর্মকর্তা।

(ওএস/এসপি/জুন ১৯, ২০২৪)