স্টাফ রিপোর্টার : ১৭ জুন ঈদ। এর আগেই চলতি সপ্তাহে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদ যেনো সেইসব ঘরে দ্বিগুন খুশি নিয়ে হাজির হয়েছে।

গত মঙ্গলবার বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঈদের উপহার হিসেবে ৭০টি উপজেলা এবং ২৬টি জেলার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে আরো ১৮ হাজার ৫৬৬টি ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে এই জেলা-উপজেলাগুলোকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন তিনি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের মোট ৭০টি উপজেলা ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হলো।এ হিসেবে আগে ঘোষিত জেলা-উপজেলাসহ মোট ৫৮টি জেলা ও ৪৬৪টি উপজেলা ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হলো।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরু করেন।

আনন্দে কান্নাজড়িত কন্ঠে হোসনে আরা বলেন, ‘অবশেষে আমার খারাপ দিন শেষ হলো। আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। নানা সময় না খেয়ে সময় পার করে দিতে হয়েছে। কখনও নিজের একটা ঘর হবে ভাবতেও পারিনি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বাঁচার পথ দেখালেন। শুরুতে প্রতিবন্ধী কার্ড, এখন ঘর। এরপরেও যদি মন থেকে তার জন্য দোয়া না করি তাহলে আমি বেইমান।

ঘর পাওয়া বাবু মিয়া বলেন, আমি স্বপ্ন দেখতাম আমার বাড়ি হবে, ঘর হবে। কিন্তু কীভাবে হবে জানা ছিলো না। হঠাৎই শুনলাম প্রধানমন্ত্রী আমাকে ঘর দিবেন। এখন আমি জায়গা পেয়েছি, ঘর পেয়েছি, বিদ্যুৎ পেয়েছি। ঘর পেয়েছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে এক ঝালমুড়ি বিক্রেতা। তিনি বলেন, এই খুশি বলে বুঝানো যাবে না। মাথার ওপর ঘর থাকবে বেঁচে থাকার জন্য কাজ করে খাওয়া জুটাতে সমস্যা হয় না। সবার আগে যে জিনিসটা দরকার, প্রধানমন্ত্রী সেটা বুঝতে পেরেছেন।

আমার রোজ মরে যেতে ইচ্ছে করতো। থাকার ঘর নেই, খাওয়ার পয়সা আজ হয়তো কাল হয় না। আমার ঘরে মেয়েরা রয়েছে, তাদের জন্য কিছু করতে পারি না। ঘর পেয়ে আমি মেয়েদের নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস ও শক্তি পেয়েছি। এবার ঈদ আমাদের জন্য অন্যরকম আনন্দের। এ আনন্দ বলে বুঝানো সম্ভব না।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের নাটোরের গুরুদাসপুরের ১৯৮টি ঘর রয়েছে। এর মধ্যে মশিন্দা ইউনিয়নের বিল বিয়াসপুরে একটি ব্যারাকের ৪০টি এবং চাপিলা ইউনিয়নের ধানুরা কোলা আশ্রয়ণে ৬০টি ও চক দিঘলিতে ৯৮টি ঘর সুবিধাভোগী পরিবারের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়। ইতঃপূর্বে গুরুদাসপুর উপজেলায় সর্বমোট ৩৯৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২২ মার্চ গুরুদাসপুর উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্প ও অন্যান্য প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের প্রায় ৪৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। শুধুমাত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৩ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। শুধুমাত্র মুজিব শতবর্ষে ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

(ওএস/এসপি/জুন ১৪, ২০২৪)