ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষে দলটির ইতিহাস ও অর্জনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার একটি বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা মূলত পূর্ব বাংলার মানুষের স্বাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত, আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার মানুষের রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে এসেছে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে, যা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যাপক বিজয় লাভ করে, কিন্তু পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। এর ফলস্বরূপ, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয় এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি সংবিধান রচনা করা হয়, যা স্বাধীন বাংলাদেশের মূলনীতিগুলো নির্ধারণ করে। দুর্ভাগ্যক্রমে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করা হয়, যা দেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়নসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করেছে।

আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই উদযাপনে দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের সংগ্রামী ও অবদানকারী নেতাদের স্মরণ ও সম্মান জানানো হয়।

আওয়ামী লীগের এই ৭৫ বছরের দীর্ঘ যাত্রা শুধু একটি রাজনৈতিক দলের ইতিহাস নয়, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং উন্নয়নের ইতিহাস। দলের এই অর্জন ও সংগ্রাম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক বিশাল প্রেরণা ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

নীলফামারীতে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষে সম্মানিত প্রবীণ নেতাদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানটি ছিল স্মরণীয় আয়োজন। দলের দীর্ঘ পথচলার নানা স্মৃতি, সংগ্রাম এবং সাফল্যের গল্প নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য নীলফামারী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ এই আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রবীণ নেতাদের মুখে দলের ইতিহাস ও সংগ্রামের কাহিনী শোনা, যা নতুন প্রজন্মকে প্রেরণা দেবে। প্রবীণ নেতারা তাদের স্মৃতিচারণ শুরু করেন।

একজন নেতা স্মরণ করেন ভাষা আন্দোলনের দিনগুলোর কথা, কিভাবে তারা ছাত্রাবস্থায় আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন এবং সেই সময়ের ত্যাগ ও সংগ্রাম। আরেকজন নেতা মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, যখন তারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দলীয় ঐক্য ও সংগ্রামের নানা দিক।

নীলফামারীতে অনুষ্ঠিত এই স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানটি ছিল অত্যন্ত অর্থবহ। প্রবীণ নেতাদের অভিজ্ঞতা ও সংগ্রামের কাহিনী নতুন প্রজন্মকে দলীয় আদর্শ ও মূল্যবোধ সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন করবে এবং ভবিষ্যতে দলের নেতৃত্বে তাদের প্রেরণা যোগাবে।

(ওআরকে/এএস/জুন ১৪, ২০২৪)