সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : ভোটের মাঠে রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস গড়লেন সাবেক ছাত্রনেতা মো: মোফাজ্জল হোসেন ভূঞা। এমনটিই বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সারাদিন আলোচনা চলছে সবার মুখে মুখে। ৫ জুন অনুষ্ঠিত কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন হেভিওয়েট চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পরাজিত করে ৮ হাজার ৫১২ ভোট বেশি পেয়ে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন তিনি। মোফাজ্জল হোসেন ভূঞা ৪র্থ ও ৫ম নির্বাচনে টানা দুইবারের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার ভাইস চেয়ারম্যান পদে থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে একটানা তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন।

জানা যায়, নিকটতম প্রতিদন্ধী প্রার্থী নূরুল আলম মো: জাহাঙ্গীর চৌধুরী কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের ১৭ বছরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ১৪ নং মোজাফরপুর ইউনিয়ন পরিষদের তিন বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তাঁর প্রয়াত বাবা হাদিস উদ্দিন চৌধুরী মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। সারা উপজেলায় তার ব্যাপক পরিচিতিও আছে। এছাড়া আলোচনায় আছে, নেত্রকোনা-৩ আসনের এমপি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা সামছুল কবির খান সহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও নেতারা জাহাঙ্গীর চৌধুরীর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অকুন্ঠ সমর্থন দেন। তবুও জাহাঙ্গীর চৌধুরী পান কাপ পিরিচ প্রতীকে পান ২৮ হাজার ৫৫৮ ভোট। অর্থাৎ মোফাজ্জল হোসেন ভূঞা জাহাঙ্গীর চৌধুরীর চেয়ে ৮ হাজার ৫১২ ভোট বেশি পান।

হুমায়ূন কবির চৌধুরী ছিলেন কেন্দুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পাইকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাকে অঘোষিত সমর্থন দেয় উপজেলা আওয়ামীলীগ। এছাড়া নেত্রকোনা-৩ আসনের সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল, সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি অধ্যাপক অপু উকিল, আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট আব্দুল মতিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণও হুমায়ূর চৌধুরীর পক্ষে মাঠে কাজ করেন। কিন্তু হুমায়ূন কবির চৌধুরী দোয়াত কলম প্রতীকে পান ২৫ হাজার ৮৮৫ ভোট। অর্থাৎ হুমায়ূন কবির চৌধুরীর চেয়ে ১১ হাজার ১৮৫ ভোট বেশি পান মোফাজ্জল হোসেন ভূঞা।

মিসেস সালমা আক্তার কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক মহিলা সম্পাদিকা, ১১ নং চিরাং ইউনিয়ন পরিষদের দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং নেত্রকোনা জেলা পরিষদের সংরক্ষিত (কেন্দুয়া-আটপাড়া) এলাকার সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। আলোচনায় আছে, প্রচুর অর্থবিত্তের মালিকও তিনি। ভোটের মাঠে সালমা আক্তার প্রচুর অর্থ বিলিয়েছেন বলেও গুঞ্জন আছে। তাছাড়া নারী প্রার্থী হিসাবে নারী ভোটারদের সহানুভুতি ভোটও পেয়েছেন তিনি। তার সমর্থনেও বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের সমর্থন ছিল। কিন্তু মোটর সাইকেল প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ৪৬৫ ভোট। অর্থাৎ সালমা আক্তারের চেয়ে ১১ হাজার ৬০৫ ভোট বেশি পান মোফাজ্জল হোসেন ভূঞা।

অনেকেই বলছেন এমন নির্বাচনী ফলাফল কেন্দুয়াতে আর দেখিনি। এটি কেন্দুয়ার নতুন ইতিহাস। নির্বাচনী ফলাফলের মাধ্যমে উপজেলা বাসীকে তাক লাগিয়ে অবাক করে দিয়েছেন মোফাজ্জল হোসেন ভূঞা। কী এমন জাদু ছিল মোফাজ্জল হোসেন ভূঞার কাছে? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে তার কর্মী সমর্থকরা দাবী করে বলেন, মোফাজ্জল হোসেন ভূঞা আমাদেরকে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি। তিনি আমাদের সুখে দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছেন। যখনই আমরা তার স্মরনাপন্ন হয়েছি, সেটি রাতই হোক আর দিনই হোক তখনই তাকে আমরা পেয়েছি। তিনি নির্ভয়ে আমাদের পাশে দাড়িয়েছে। গত দশ বছর ধরে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তিনি। এই পদে থেকে কোনদিন আমাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেননি। তাই আমরা কারও বা কোন নেতার কথা না শুনে আমাদের প্রিয় মানুষ মোফাজ্জল হোসেন ভূঞাকেই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হতে ভোট দিয়েছি।

নির্বাচিত হওয়ার পর মোফাজ্জল হোসেন ভূঞা তার প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে বলেন, মানুষের ভালোবাসাই আমার শক্তি। অতীতে যারা আমাকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন তাদেরকে আমি কিছুই দিতে পারিনি। কিন্তু আমি তাদের অকাতরে ভালোবাসা বিলিয়ে দিয়েছি। কোনদিন তাদের মিথ্যা আশ^াস দেইনি। মোফাজ্জল হোসেন বলেন, উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়নে ও পৌর এলাকায় যেসব ব্যক্তি এই দশ বছরে মৃত্যু বরণ করেছেন আমার জানামতে সব জানাযাতেই, অন্তেষ্টীক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করেছি। তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেছি এবং পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়েছি। মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা আমার ছিল, আছে এবং থাকবে। তিনি বলেন, আমার ঘোড়ার দৌড় একানেই শেষ নয়।

(এসবিএস/এএস/জুন ০৬, ২০২৪)