শিতাংশু গুহ


ট্রাম্পের পর এবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন পুত্র হান্টার বাইডেন ফৌজদারি অপরাধে বিচারের সম্মুখীন। বিচার শুরু হয়েছে সোমবার ডেলওয়ারে একটি আদালতে, বাইডেনের নির্বাচনী সদর দফতরের অদূরে। ইতিমধ্যে ১২ জন জুরি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে প্রাথমিক শুনানি শেষ চলছে। হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে ন্দুক ক্রয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। সেপ্টেম্বরে হান্টার বাইডেন পুনরায় ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার মামলায় বিচারের সম্মুখীন হবেন, তিনি ক’বছর ট্যাক্স দেননি। 

বন্দুক ক্রয় মামলায় গত জুলাই মাসে একটি সমঝোতা হয়েছিলো, তাতে জেলে যাওয়ার বিধান ছিলোনা, বিচারক তা গ্রহণ করেননি। এ মামলায় হান্টার বাইডেনের ২৫বছর জেল, ৭৫০হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে। তবে যেহেতু এটি হান্টার বাইডেনের প্রথম অপরাধ, দোষী সাব্যস্ত হলে তার জেল নাও হতে পারে। এই মামলার বিচারক মেরিলিন নরিকা এবং হান্টার বাইডেন সোমবার তার সামনে হাজিরা দিয়েছেন। বিচার ১-২ সপ্তাহে শেষ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বরে ফেডারেল জুরি হান্টার বাইডেনকে বন্দুক ক্রয়ের সাথে তিনটি ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত করে, (১) বন্দুক বিক্রেতাকে মিথ্যা বলা (২) বন্দুক ক্রয়ের আবেদনে মিথ্যা তথ্য দেয়া ও (৩) ১২-২৩ অক্টবর ২০১৮-মোট ১১ দিন একটি অবৈধ অস্ত্র নিজের কাছে রাখা। আইনজ্ঞরা বলছেন, বিচার চলাকালীন সময়েও আর একটি সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব। রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় হান্টার বাইডেনের প্রথমা স্ত্রী ক্যাথলিন বাহলে-কে সাক্ষী হিসাবে ডাকবেন বলে জানিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্যে এ মামলা একটি মাথাব্যথা। যদিও তিনি অভিযুক্ত নন, অভিযুক্ত তার পুত্র, তবু নির্বাচনী বছরে এ মামলা তাকে বিব্রত করছে। হান্টারের সাবেক স্ত্রী হয়তো পরিবারের অনেক তথ্য জানিয়ে দিবেন, যা অস্বস্তিকর হতে পারে। সাবেক স্ত্রীর সাথে হান্টারের দেন-পাওনা নিয়ে মামলা চলছে দীর্ঘদিন। হান্টার বাইডেনের বিধবা ভাতৃবধূ হ্যালি বাইডেনকেও হয়তো সাক্ষ্য হিসাবে ডাকা হবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন শিবিরের ভয় যদি ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়ে’?

প্রেসিডেন্ট বাইডেন সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট, আমি পিতা’। সাথে যোগ দেন, আমি ও জিল আমাদের পুত্রকে ভালবাসি এবং হান্টারের জন্যে আমরা গর্বিত। সোমবার সারাদিন ফার্স্টলেডী জিল বাইডেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার আদালতে হাজির ছিলেন জিল বাইডেন, কন্যা এশলে বাইডেন। হান্টারের পত্নী মেলিসা কোহেন বাইডেনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

ওপেনিং ষ্টেটমেন্টে সরকারি কৌঁসুলি বলেন, কেউ আইনের উর্ধে নন, হান্টার বাইডেনের জন্যে একই আইন। কৌঁসুলি ডেরেক হাইন্স অভিযুক্ত হান্টার বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মাদকাসক্তি হয়তো চয়েস নয়, কিন্তু বন্দুক কিনতে মিথ্যা বলা একটি চয়েস। হান্টার বাইডেনের এটর্নি আবে লোয়েল তখন বলেন, মাদকাসক্ত ব্যক্তি সচরাচর তাদের নেশা নিয়ে মিথ্যা বলতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ঘন্টা দেড়েক ওপেনিং স্টেটমেন্টের পর সাক্ষী ডাকা শুরু হয়।

হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় ৫বছর আগে ২০২০’র নির্বাচনের পূর্বে। হান্টার বাইডেন তার বাবা ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কন্সালটেনসিং ও লবিং-র সাথে যুক্ত ছিলেন। ইউক্রেন ও চীনের সাথে ব্যবসায় তিনি তাঁর পিতার ভাবমূর্তি কাজে লাগান। বিজনেস আলোচনায় তিনি কখনো-সখনো অন্যদের শুনিয়ে তার পিতার সাথে স্পিকারফোনে কথা বলতেন। বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে পরেও তদন্ত চলছিলো, কিন্তু বিচার বিভাগ বন্দুক ক্রয় ও ট্যাক্স ফাঁকি নিয়ে মামলা করেনি। রিপাবলিকানরা হান্টার বাইডেনের ব্যবসার সাথে বাইডেনের ইম্পিচমেন্ট তদন্ত যুক্ত করতে চাইলেও প্রমাণের অভাবে তা সম্ভব হয়নি। তবে বন্দুক ক্রয়ের এ মামলায় হান্টার বাইডেনের দোষী হবার সম্ভবনা উজ্জ্বল বলে আইনজ্ঞগণ মন্তব্য করছেন।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।