নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইলে বাড়ির সামনে দুইটি বাঁশের বেড়া দিযে তিন মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে একটি পরিবারকে। বাধ্য হয়ে বাড়ির পিছন দিক দিয়ে একটু সরু গলি দিয়ে অন্যের উঠানের পর দিয়ে যাতায়াত করছে ওই পরিবারটি। প্রতিকার চেয়ে আদালতে অভিযোগের পর ভূমি কর্মকর্তা তদন্তে গেলে, তাঁর সামনেই প্রতিপক্ষের মারপিটের শিকার হযেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস জানিয়েছেন পুলিশ।

সরেজমিনে দেখা যায়, আশি উর্ধো বয়স্ক নজরুল ইসলাম, বয়সের ভারে চলাফেরা করাও একটু কষ্টসাধ্য, অন্যের সাহায্য ছাড়া স্ট্রোক করা তার স্ত্রীও হাটাচলা করতে পারেন না। পাঁচ শতাধিক স্থানীয় শালিস বিচার করেছেন তিনি, এখন নিজের বাড়ির চারপাশে বাঁশের বেড়ায় অবরুদ্ধ নড়াইল সদরের চারিখাদা গ্রামের নজরুল ইসলামের পরিবার।

পেছনের অংশের সরুগলি ও অন্যের উঠানের উপর দিয়ে চলাচল করতে হয় পরিবারের সদস্যদের। সেই চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, বয়স্ক নজরুল ইসলামের সাথে তাঁর চাচাতো ভাইদের জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এরই জের ধরে গত তিনমাস আগে নজরুল ইসলামের বাড়ির সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছে চাচাতো ভাইয়েরা। তখন ভুক্তভোগী নজরুল ইসলামের পরিবার আদালতে একটি অভিযোগ করেন।

এর প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সকালে মাইজপাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা অশোক কুমার সেন সরেজমিন তদন্তে যান। এসময় ভূমি কর্মকর্তার সামনেই নজরুল ইসলামের পরিবারের সকলকে গালিগালাজ করেন প্রতিপক্ষরা। গালিগালাজ করতে নিষেধ করায় নজরুল ইসলাম ও তাঁর দুই ছেলে বাশিরুল ইসলাম ও মাহিউল ইসলামকে মারধর করে প্রতিপক্ষ হাসান মোল্যা, গোলাম আজম, মহিম মোল্যা, ইজাজ মোল্যা, জিন্নাত মোল্যাসহ আরও কয়েকজন। এসময় ঠেকাতে আসায় নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ পাখী বেগমকেও মারপিট করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে আহত ওই নারী বর্তমানে নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে আছেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, পূর্বপুরুষের সময় থেকে এই ভিটা মাটিতে বসবাস করছি। জমির সকল কাগজ থাকা স্বত্বেও তারা আমাদের জমির উপর জোর পূর্বক বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে। আদালতে মামলা করেছি বলে পরিবারের সবাইকে মারধর করেছে। গায়ে জোর থাকলে কি এভাবে মারধর করে আটকে রাখবে, আইন আদালত বলে কি কিছু নাই? জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই পূর্বক ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা ছেলে বাশিরুল ও মিলনের।

তবে অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে তাদের মধ্যে জিন্নাত মোল্যাকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ওই জমি আমাদের, ওরা ভোগদখল করত। ওরা যে কাগজপত্র দেখায় তা গ্রহণযোগ্য না। তাই ওই জায়গা ঘিরে দিয়েছেন। আর কথার প্রসঙ্গে একটু গলা ধরে ঠেলাঠেলি, হাত ধরে ঝাকাঝাকি হয়ছে। সেরকম কোন মারামারি হয় নি বলে দাবি অভিযুক্তের।

নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতিবেদন কোর্টে পাঠাবো।

নজরুল ইসলামের পূর্বপুরুষ দীর্ঘ একশত বছর ধরে এই বসত-ভিটার উপর বসবাস করে আসছেন।

(আরএম/এএস/জুন ০৩, ২০২৪)