রূপক মুখার্জি, নড়াইল : ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে নড়াইল সদর ও লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নড়াইল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মাঝে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে এবং তা চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায় নাই।

নড়াইল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী মাঠে থাকলেও মূল লড়াই হবে দুইজনের মধ্যে। তাদের মধ্যে একজন নবীন আর অন্যজন প্রবীণ।

৭ বারের চন্ডীবরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রবীণ ব্যক্তিত্ব আজিজুর রহমান ভূইয়া লড়ছেন আনারস প্রতীক নিয়ে আর বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তরুণ তোফায়েল মাহামুদ তুফান মাঠে রয়েছেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে।

নবীন আর প্রবীণের এই লড়াইয়ে প্রচারণায় দুজনেই সমান তালে রয়েছেন। এছাড়া অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী মিলন মল্লিক লড়ছেন কলস প্রতীক নিয়ে।

এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় ভোটাররা কিছুটা চাপমুক্ত। তবে প্রবীণ প্রার্থী আজিজুর রহমান ভূইয়া নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মোর্তজার আশির্বাদপুস্ট বলে গুঞ্জন রয়েছে। যে কারণে প্রতিপক্ষের প্রার্থীরা কিছুটা হলেও চাপ অনুভব করছেন বলে জানা গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ রয়েছেন প্রবীণ আজিজুর রহমান ভুঁইয়ার পক্ষে। তারা প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের অপর অংশ তোফায়েল মাহামুদ তুফানের পক্ষে কিছুটা গোপনে মাঠে কাজ করছেন। নড়াইল-১ আসনের এমপি কবীরুল হক মুক্তি নেপথ্যে সমর্থন করছেন তোফায়েল মাহামুদকে। ফলে নড়াইল-১ আসনের এমপি কবীরুল হক মুক্তির অনুসারীরা একপক্ষে এবং নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি-বিন-মোর্তজার অনুসারীরা রয়েছেন অন্য পক্ষে। এই দুইজন সংসদ সদস্যের প্রভাবে নির্বাচনে তাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা।

সীতারামপুর গ্রামের ভোটার অলোক বিশ্বাস জানান, এবারে কোনো নৌকা মার্কা নেই। আমরা যে প্রার্থীকে পছন্দ করবো, তাকেই ভোট দিতে পারবো।

বাশগ্রামের প্রবীণ ভোটার ইউসুফ আলী জানান, গতবারের মতো ভোট দেওয়ার জন্য কোনো চাপ নেই। আমরা কেন্দ্রে গিয়ে যাকে পছন্দ হয় তাকেই ভোট দিয়ে আসবো।

নির্বাচনে দুই প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে একে অপরের বিরুদ্ধে। তোফায়েল মাহামুদ তুফান বলেন, আমার প্রতিপক্ষ সম্পদশালী-হোন্ডা গুন্ডা আছে। কালিয়া উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও নড়াইল সদরে প্রভাব খাটানো হচ্ছে। আমাদের লোকদের হুমকি দিচ্ছে প্রতিপক্ষ। নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষ ভোট না পেলেও তিনি পাশ করবেন একথা বলে ভয়ের পরিবেশ করা হচ্ছে।

প্রতিপক্ষের প্রবীণ প্রার্থী আজিজুর রহমান ভুঁইয়া অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, সাত বার নির্বাচনে জয়লাভ করেছি। কোনো প্রভাব খাটিয়ে ভোট করিনি। জনগণ ভালোবেসেই আমাকে ভোট দেবে। ভোটে যে জয়লাভ করবে সেই চেয়ারম্যান হবে।

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠে রয়েছেন রিটানিং অফিসার নিযুক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে এবং প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রার্থীকে জরিমানা করা হচ্ছে।

রিটানিং কর্মকর্তা (নড়াইল সদর ও লোহাগড়া) ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ্বতী শীল বলেন, ইতিমধ্যে দুটি উপজেলার প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে আমরা শতভাগ ভালো নির্বাচন করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।

নড়াইল সদর উপজেলায় মোট ভোটার দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৬০ জন। এরমধ্যে পুরুষ এক লাখ ২০ হাজার ১২৯ ও নারী এক লাখ ২১ হাজার ৬৩০ জন।

(আরএম/এএস/মে ২১, ২০২৪)