মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের ৪৮০টি উপজেলা জুড়ে এখন নির্বাচনের হাওয়া। তফসিল অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ১১২টি উপজেলার মধ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৯ মে।

এরই মধ্যে নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠছে ওই উপজেলার ভোটের মাঠ। প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোটও চাচ্ছেন। এবারও নির্বাচনে ফের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হচ্ছেন প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা, বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। ভোটের মাঠে তাঁর প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী কৃষি মন্ত্রী উপাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আব্দুস শহীদ এমপি’র ছোট ভাই ইমতিয়াজ আহমদ বুলবুল। এছাড়াও ভোটের মাঠে চেয়ারম্যান পদে সক্রিয় প্রচারণায় রয়েছেন আরও দুই প্রার্থী।

কমগঞ্জের রাজনীতি, ভোটের মাঠ, ভোটারদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন আর উন্নয়ন ভাবনা সহ সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা হয় পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এর সাথে এই প্রতিবেদকের।

দীর্ঘ আলাপকালে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, মানুষ যা চায় তা যদি পূরণ না করতে পারা যায়, তাহলে সফলতার ঘাটতি থেকে যায়। আর কেউ কোন চুড়ান্ত সফলতা যে অর্জন করে ফেলবে এটারও কোন সুযোগ নেই। সুতরাং আমি মনে করি আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যর্থ নই, আমি সফল হয়েছি এই কারণে যে, দীর্ঘ পাঁচবছর যেভাবে উপজেলা পরিষদ পরিচালিত হওয়ার বিধি-বিধান আছে সেই বিধি-বিধান নিয়েই পরিষদ চালিয়েছি। জনগণকে নিয়েই তো উন্নয়ন। জনগণের সুখ, দু:খ ভালবাসা নিয়েই তো পরিষদ। সে হিসাবে আমি নিজেকে সফল মনে করি।

সরকারের দেয়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাই উন্নয়ন চাই। কিন্তু আমাদের কোন গ্যারান্টি নাই উন্নয়নের কত টাকা পাবো। এটা যদি আমার জানা না থাকে তাহলে পরিকল্পনা করব কীভাবে। টাকা আসার পরে পরিকল্পনা করি কীভাবে খরচ করা যায়। এডিবির একটা ফান্ড আছে, স্থানীয় রাজস্ব আছে এগুলো মিলেই আমাদের উন্নয়ন ফান্ড। এগুলো খরচ করারও কিছু বিধান রয়েছে। রাজস্ব খাতের য়ে অর্থ সেটারও খরচ করার কতগুলো বিধান রয়েছে। সুতরাং বিধি-বিধানের বাহিরে গিয়ে খরচ করার কোন সুযোগ নেই। এখানে যা আসে টাকা-পয়সা সব আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এবং সকল ইউনিয়নকে প্রাধান্য দিয়েই কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা হয়। সুতরাং এখানে আমি এই কাজ করব, সেই করব সেটা আগাম বলার সুযোগ নাই। সরকার নীতিমালা দিয়েছে, নীতিমালার বাহিরে টাকা খরচ করার সুযোগ নেই। আর এককভাবেও টাকা খরচ কোন অধিকার নেই। পরিষদ যে সিদ্ধান্ত দেয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং বাস্তবায়ন করা হয়।

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় তাঁর সাথে। বলেন, ভোট দিবে জনগণ, এখানে নির্দলীয়ভাবে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি, জনগণ যাকে ভালবাসবে তাঁকে ভোট দিবে। ভোটের ব্যালেটে তো চিহ্ন থাকবেনা কে আওয়ামীলীগ আর কে আওয়ামীলীগ নয়। বিগত নির্বাচনেও ভোট পেয়েছি ৪৯ হাজারেরও বেশি। এটা নিঃসন্দেহে জনগণের ভালবাসা। দলমত নির্বিশেষে সবাই আমাকে ভোট দিয়েছেন। শুধু সব ভোট আওয়ামীলীগের ভোট নয়, আওয়ামীলীগেরও বড় একটি অংশ আমাকে ভোট দিয়েছেন। যারা ত্যাগী নেতাকর্মী আছেন তারা আমার পাশে আছেন। আর হাইব্রিড আমার চেয়ে একটু দূরে আছেন। এই হাইব্রিড থেকে আমাদের বাঁচতে হবে। হাইব্রিড থেকে না বাঁচলে আমাদের রাজনীতির যে চিন্তা চেতনা যেটা আছে আমাদের দেশ পরিচালনার ব্যাপারে আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাব। আমরা চাই স্বাধীনতার চেতনাটা বাস্তবায়ন হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন ছিল সেটা আমরা দেশে বাস্তবায়ন করতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

রণাঙ্গনের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশ নিয়ে নিজের প্রত্যাশার পাশাপাশি আক্ষেপ করে বলেন, দীর্ঘ সংগ্রাম-আন্দোলনের মাধ্যমে দেশটা স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার মূল চেতনা নিয়েই দেশ পরিচালিত হোক এটাই একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যাশা।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই চেতনাকে বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে যে কাজ করে যাচ্ছেন। একটা জাতিকে একটা চেতনার মধ্যে উদ্বুদ্ধ রেখেছেন। সেই চেতনা নিয়েই আমরা চলছি। কিন্তু মাঝে মধ্যে আমরা যখন দেখি স্বাধীনতার চেতনার বাহিরেও কিছুু কাজ কর্ম হয়। যখন একজন অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায়, তখন আসলে খুবই কষ্ট লাগে। কিছু বলার ভাষা থাকে না।

(একে/এএস/মে ১৯, ২০২৪)