রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের নগরকান্দার ‌চাঞ্চল্যকর অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র অন্তর হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আজিজুলকে ‌৬ বছর পর ‌ফরিদপুর জেলার ‌ভাঙ্গা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব- ১০।

আজ শনিবার সকালে র‌্যাব-১০ এর কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তথ্য জানান ‌সংস্থাটির কোম্পানি অধিনায়ক লে. কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার।

তিনি জানান, গত ০৭ জুন ২০১৮ তারিখে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দার থানাধীন তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদী পাগলপাড়া গ্রামের গ্রিস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তর (১৪) রাতে তারাবি'র নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। তারাবির নামাজ শেষ হওয়ার পরও অন্তর বাসায় না ফেরায় অন্তরের মা সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুজি করে কোথায় তার কোন সন্ধান পাননি। পরদিন অন্তরের মা জান্নাতি বেগম নগরকান্দা থানায় তার ছেলে অন্তরের নিখোঁজের ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ঐদিন রাতেই জান্নাতি বেগমের মুঠোফোনে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা কল দিয়ে ছেলে অন্তরের মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। অন্তরের মা তার স্বামীর সাথে কথা বলে তাদের একমাত্র সন্তান অন্তরকে উদ্ধারের জন্য অপহরণকারীদের কথামত ১৪ জুন ২০১৮ পুলিশের উপস্থিতিতে উক্ত এলাকায় একটি সেচ মেশিনের ঘরে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা রেখে আসেন। গত ১৫ জুন ২০১৮ তারিখ ভিকটিম অন্তরের মা জান্নাতি বেগম বাদী হয়ে সন্দেহজনক ১৬ জনের বিরুদ্ধে নগরকান্দা থানায় একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেন। উক্ত ঘটনার পর গত ২৪ জুন ২০১৮ তারিখ পুলিশ মুক্তিপণ দাবি করা মুঠোফোনের মালিক মাহবুব আলম ও তাঁর ভাই জুবায়ের ব্যাপারীকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামিদের স্বীকারোক্তি ও তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৬ জুন ২০১৮ তারিখ রাতে পুলিশ ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানাধীন চক এলাকার খালপাড় থেকে পুঁতে রাখা অবস্থায় ভিকটিম আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তরের লাশ উদ্ধার করে। উক্ত ঘটনা তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সহ সোসাল মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। উক্ত ঘটনার পর গত ২৫ অক্টোবর ২০১৮ তারিখ মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা গ্রেফতারকৃত আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ৬ জনকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

পরবর্তীতে গত ২৭ মার্চ ২০২৪ তারিখ ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় ৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি সকল আসামিকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা প্রদান করা হয়। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদি গ্রামের মাহাবুব আলম (৩৬), পিপরুল গ্রামের কামাল মাতুব্বর (৩২) ও দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের খোকন মাতুব্বর (৪৮)।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন পাগলপাড়া গ্রামের আশরাফ শেখ (৩৪), তাঁর ভাই আজিজুল শেখ (৩২) এবং দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের সুজন মাতুব্বর(৩৬)। বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনের রায় ঘোষনার পর দণ্ডপ্রাপ্ত ৬ জন আসামিদের মধ্যে ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তারা এখন কারাভোগ করছেন। এদিকে, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত একমাত্র পলাতক আসামি আজিজুল শেখ আত্মগোপনে থাকায় এতোদিন তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

রায় ঘোষণার পর র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩ ফরিদপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল আজিজুল শেখ’কে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং আসামির অবস্থান ও গতিবিধি সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার ‌১৭ মে ২০২৪ তারিখ দুপুর আনুমানিক ১২ টার দিকে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩ ফরিদপুর ক্যাম্পের উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ফরিদপুর জেলার ভাংগা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে আসামি আজিজুল শেখকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি অপহরণ ও হত্যার সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামি আজিজুল বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক যাবজ্জীবন রায় ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে আত্মগোপন করে ছিল। সর্বশেষ পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া এলাকায় কাঠমিস্ত্রী ও দর্জি পেশায় কাজ করে আত্মগোপন করে ছিল বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আসামি আজিজুল বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয়। এই নিয়ে এই মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত সবগুলো আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

(আরআর/এসপি/মে ১৮, ২০২৪)