আব্দুল্লাহ আল মাসরুফ, কুমিল্লা : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আলকরা যুবলীগ নেতা জামাল উদ্দিন  হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো: মফিজুর রহমান খন্দকার (৫২) ও মো: রেজাউল করিম বাবলু (৪২) কে আটক করেছে র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ এর একটি আভিযানিক দল। 

আটককৃত মফিজ উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের শিলরী গ্রামের মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে ও বাবলু একই ইউনিয়নের আলকরা গ্রামের নজির আহম্মদ এর ছেলে।

সোমবার (১৩ মে) ভোর রাতে কুমিল্লার কোতয়ালী থানাধিন শাসনগাছা এলাকা থেকে পলায়নকালে তাদেরকে আটক করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ এর কোম্পানী অধিনায়ক ও উপ-পরিচালক লে: কমান্ডার মাহমুদুল হাসান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ এর একটি আভিযানিক দল সোমবার ভোর রাতে কুমিল্লা কোতয়ালী থানাধিন শাসনগাছা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে মফিজুর রহমান খন্দকার ও রেজাউল করিম বাবলু নামে চৌদ্দগ্রামের যুবলীগ নেতা জামাল উদ্দিন প্রকাশ বাক্কা জামাল হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামীকে আটক করে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে আটককৃতদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ০৮ জানয়ারি রাতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়ন যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি মো: জামাল উদ্দিন প্রকাশ বাক্কা জামালকে ডেকে নিয়ে মহাসড়কের পদুয়া রাস্তার মাথা এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বত্তরা। এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন জোহরা আক্তার বাদী হয়ে ১০ জানুয়ারি আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চু সহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে একই বছর ১৬ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার তদন্তপূর্বক স্বাক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে প্রধান আসামি ইসমাইল হোসেন বাচ্চু সহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

পরবর্তীতে আদালতে মামলাটির বিচারকার্য শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত রোববার (১২ মে) দুপুরে প্রধান আসামি সহ ০৯ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড, ০৯ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজা ও সেই সাথে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড প্রদান এবং ০৫ জনকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, চতুর্থ আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন। এ রায় প্রদানকালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো: আলী হোসেন সহ বেকসুর খালাস পাওয়া অপর দুই আসামী আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১৯ মার্চ-২০২৪ যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো: আলী হোসেনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে র‌্যাব।

মামলার এজাহার সূত্রে আরো জানা গেছে, আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চু নির্বাচিত হয়ে ইউনিয়নের সাধারণ জনগণের উপর অত্যাচার, অপকর্ম, চাঁদাবাজি সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড শুরু করে। যুবলীগ নেতা জামাল উদ্দিন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করলে ভিকটিমের সাথে চেয়ারম্যান বাচ্চুর শক্রতা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার জেরে ইউপি চেয়ারম্যান বাচ্চু কয়েকবার ভিকটিমকে হত্যার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে অপরাপর আসামীরা পরষ্পর যোগসাজসে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলকরা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জামাল উদ্দিনকে ২০১৬ সালের ০৮ জানুয়ারি রাতে ডেকে নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পদুয়া রাস্তার মাথা এলাকায় প্রথমে গুলি করে, পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়েরের করেন। পরে তদন্ত সাপেক্ষে আদালতে চার্জশীট দেয় পুলিশ। বিচারকার্য শেষে রোববার (১২ মে) এ মামলার রায় ঘোষণা করে আদালত।

(এএম/এসপি/মে ১৪, ২০২৪)