স্টাফ রিপোর্টার : পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। ঈদ-আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ সালামি হিসেবে নতুন টাকা দেওয়া-নেওয়া। ফলে ঈদ মৌসুমে নতুন টাকার চাহিদা থাকে অনেক বেশি। নতুন টাকার চাহিদা কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় বসেছে টাকার হাট। শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে নতুন টাকা বেচাকেনা। তবে অন্যবারে চেয়ে এবার নতুন টাকার দাম বেড়েছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।

শনিবার (৬ এপ্রিল) সরেজমিনে রাজধানীর গুলিস্তান শপিং সেন্টার (স্পোর্টস) মার্কেটের সামনে নতুন টাকা কিনতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। দুই টাকার নোট থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার নতুন নোটের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। তাদের ঘিরে রেখেছেন রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতারা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আগ মুহূর্তে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার বেশি বিক্রি তাদের। পাঁচ টাকা, ১০ টাকা, ৫০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি। এবার ২০ টাকার নোটের একটি বান্ডেল (এক হাজার টাকা) বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১৫০ টাকায়। ১০ টাকার বান্ডেল (এক হাজার টাকা) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা বেশি অর্থাৎ এক হাজার ৩০০ টাকা। পাঁচ টাকার নোট ১০০টি নিলে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ১৫০ টাকা। এছাড়াও হাজারে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে ১০০ টাকার নোটের বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে। ৫০ টাকার নোট এক বান্ডেল (এক হাজার টাকা) নিতে হলে বাড়তি দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা। দুই টাকার নোট ৬০০ টাকার বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে পরিবারের ছোট-বড় সবাই ও আত্মীয় স্বজনকে বকশিশ/সালামি দেওয়ার জন্য নতুন টাকা নিতে এসেছেন তারা। এছাড়াও অনেকে সহকর্মী, অনেকে আবার রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ঈদ উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য নতুন টাকা সংগ্রহ করছেন। তবে এ বছর টাকার উচ্চমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অভিযোগ করছেন তারা।

টাকা কিনতে আসা ধানমন্ডির বাসিন্দা ফয়সাল বলেন, ‘ভাগনে-ভাতিজি ও ছোট ভাইদের ঈদ সালামি দেবো, সে কারণে পাঁচ হাজার টাকা কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু গতবারের চেয়ে এবার দাম চড়া। এ বান্ডেল ১০ টাকার নোট (এক হাজার) কিনেছি, বাড়তি ৩০০ টাকা দিতে হয়েছে। সব দোকানে একই দাম। কোনো দামাদামিরও সুযোগ নেই।’

মজিবুর রহমান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘আগে টাকা কেনার জন্য গুলিস্তান আসা হয়নি। জালনোট আছে কি না সেই ভয়ও আছে। তবুও নাতি-নাতনি ও প্রতিবেশিদের জন্য নতুন টাকা সংগ্রহ করেছি। ১০ টাকা, ২০ টাকা ও ৫০ টাকার বান্ডেল কিনেছি।’

মো. আনিস নামের এক টাকা ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা মূলত ব্যাংকের কর্মচারী ও বিভিন্ন ব্যাংকারদের টাকা সংগ্রহ করি। এবার তারাই গতবারের চেয়ে ৫০-৬০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিছু করার নেই। তবে আমরা খুব বেশি লাভ করতে পারছি না। ঈদের পর দাম কমে যাবে।’

আরেক ব্যবসায়ী জামিরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেরি করে টাকা ছাড়ছে। ওখান থেকেও সিন্ডিকেটে টাকা আসে। বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এবার শুরু থেকে বেচাকেনা তেমন হয়নি। অনেকেই আছেন ব্যাংকারদের আত্মীয়-স্বজন, তারা তাদের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন।’

জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজারে নতুন টাকা ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৩১ মার্চ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করছেন গ্রাহকরা। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৮০টি শাখা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় নতুন টাকা বিনিময় করা হচ্ছে।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ০৬, ২০২৪)