রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি মাসুদের একমাত্র পুত্র, তরুণ আওয়ামী লীগনেতা সৈয়দ মুঈদ হাসান আসিফ ওরফে সৈয়দ আসিফ মাসুদ (৪৪) এর মৃত্যু ঘিরে ফরিদপুর শহর জুড়ে চলছে বিতর্ক।

সবাই একটি প্রশ্নই তুলছেন তাহলে কি ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মারা গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেনের একমাত্র পুত্র আসিফ মাসুদ?


মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আসিফ মাসুদ হেঁটে হেঁটেই যান ডায়াবেটিক হাসপাতালে! পরে এ্যাম্বুলেন্সে হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে যায় তার লাশ।

ফরিদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালের চিকিৎসাপত্র মতে- ফরিদপুর ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রয়াত আসিফ মাসুদ। অথচ তার ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে মৃত অবস্থাতেই তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল! আসিফ মাসুদের চিকিৎসা ও মৃত্যু নিয়ে ফরিদপুর ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই ডাবল ষ্ট্যাণ্ডার্ড অবস্থান কিসের ইঙ্গিত দেয়?

হাসপাতালটির ভয়ঙ্কর এই নির্লজ্জ কিংবা বর্বর অবস্থান নিয়ে কী কারো কোনো কিছুই বলবার কিংবা করবার নেই? এমন একটি হৃদয় বিদারক মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনে ভূমিকা রাখার দায় কী এড়াতে পারেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জন? আসিফের মৃত্যুকে ঘিরে এসব নানান প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।

এই মৃত্যুকে ঘিরে আরও যেসব প্রশ্নের অবতারণা হচ্ছে ফরিদপুরে তা হলো- এক দাপুটে আ.লীগ নেতা পরিচালনা করেন ফরিদপুর জেলা ডায়াবেটিক সমিতি। এই কারণেই কী ডায়াবেটিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে কথা বলেন না কেউ? নাকি সেবা নয় পুরাই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে ফরিদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতাল?

সেবার পরিবর্তে যদি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হয়ে যায় ফরিদপুর ডায়াবেটিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, তবে এই দুর্নীতিবাজ সিণ্ডিকেটের বিরুদ্ধে এখনই রুখে দাঁড়ানোর সময় বলেও মনে করছেন ফরিদপুরের সাধারণ মানুষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালের এক কর্মচারী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জানান, 'আমি শুনলাম আসিফ ভাই হাসপাতালে এসেছেন, আমি গিয়ে দেখি তিনি প্রসেনজিৎ স্যারের (ডা. প্রসেনজিৎ প্রামাণিক) কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তারপর আমি চলে আসি। একটু পর শুনি আসিফ ভাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরেছেন। আমি ছুটে গিয়ে দেখি প্রসেনজিৎ স্যার আসিফ ভাইয়ের বুকে অনবরত পাঙ্কস করছেন, আর জিজ্ঞেস করছেন নিচে গাড়ী রেডি আছে কিনা? এসময় স্যারের শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছিলো, একটু পর গাড়ী রেডি আছে বললে তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে পাঠানো হয়, ওই সময় আসিফ ভাইয়ের পরিবারের অনেক সদস্যই ওইখানে উপস্থিত ছিলেন।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, 'তখন তাঁর মৃত্যু হয়েছিলো কিনা আমি তা কেমনে বুঝবো, আমি তো আর ডাক্তার নই।'

ফরিদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালে হেঁটে হেঁটে প্রবেশ করা আসিফ মাসুদের মৃত্যুর বিষয়ে ফরিদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম জাহাঙ্গীর চৌধুরী টিটু'র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, 'ফরিদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালের সভাপতি মীর নাছির সাহেব এ বিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ হলে এই বিষয়ে জানতে পারবেন।' এক প্রশ্নের জবাবে ডা. টিটু জানান, ' আমাকে (ফরিদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক, এ এস এম জাহাঙ্গীর চৌধুরী টিটু) আহবায়ক এবং ফরিদপুর ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. জহিরুল ইসলাম মিয়াকে সদস্য ও ফরিদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালের পরিচালক, ডা. মো. মোসলেম উদ্দিনকে সদস্য করে মোট তিন সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি করে দিয়েছেন ডায়াবেটিসের সভাপতি মীর নাছির সাহেব।'

একই বিষয়ে ফরিদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মোসলেম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, 'আমরা এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছি, উপস্থিত সংশ্লিষ্ট সবার থেকে রেকর্ডেড ও লিখিত বক্তব্য নেয়া হচ্ছে। পরিচালক ডা. মোসলেম উদ্দিন আরও জানান, রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এই বিষয়ে আরেকটি চিঠি এসেছে, জেলা প্রশাসনও এ বিষয়ে তদন্ত করবেন। তিনি জানান, তারা তাদের মতো তদন্ত করুক, আমরাও আমাদের তদন্ত করি। তদন্ত শেষে সবকিছু জানা যাবে বলে আশা রাখি।'


(আরআর/এএস/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪)