ঝিনাইদহে ঋণের চাপে আত্মহত্যা বাড়ছে
অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে ঋণগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আর এই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে সুদি মহাজনদের চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকে। সুদি মহাজনদের ঋণের ফাঁদে শুধু নিম্নবিত্ত নয়, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরাও আটকা পড়ে যাচ্ছে। গেল বছর জেলাজুড়ে সুদি মহাজনদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান চালানোর পর তাদের দৌরাত্ম কিছুটা কমে গেছিল। হঠাৎ করেই আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তারা।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে সুদি মহাজনদের চাপে সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের চা দোকানী সিরাজুল ইসলাম সুরুজ, শৈলকূপার দহকুলা গ্রামের ফার্মেসী ব্যবসায়ী ইতাহার আলী,গাড়াগঞ্জের ব্যবসায়ী আরজু মিয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়,সুদি মহাজনেরা টাকা দেওয়ার সময় খুব ভাল ব্যবহার করে। পরবর্তীতে তারা কৌশলে আসল আর সুদ একসাথে মিলিয়ে টাকা ধার হিসাবে ষ্ট্যাম্পে লিখে নেয়। কখনো কখনো ব্যাংকের ব্ল্যাঙ্ক চেকও নিয়ে থাকে। ফলে সুদি মহাজনদের বিরুদ্ধে কিছু করার থাকে না। পরে ঋণের টাকা শোধ করতে না পারলে মামলা করে। এতে করে লোক লজ্জার ভয়ে অনেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।
জেলার সচেতন নাগরিক সমাজের দাবি, বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র সমবায় সমিতি গড়ে তুলে সুদের রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে অসাধু ব্যক্তি ও কতিপয় প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে তথা সুদি মহাজনদের দৌরাত্ম্যও চোখে পড়ার মতো। এসব বিষয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে আবারও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। তা না হলে এভাবেই একের পর এক প্রাণ ঝরে যাবে সুদ ও ঋণের বেড়াজালে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী সাবেক অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু জানান, জেলাজুড়ে নামসর্বস্ব কিছু এনজিও এবং সুদি মহাজনেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরা এক লাখ টাকার বিপরীতে অনেক সময় সুদ হিসাবে সপ্তাহে ৮ থেকে ১০হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। এতে করে অনেকে তাদের আসল টাকা তো দূরে থাক সুদের টাকায় পরিশোধ করতে পারে না। সুদি মহাজনেরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথাও বলতে পারে না। তাদের চাপে এক পর্যায়ে বাপদাদার ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় নতুবা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। প্রশাসনের উচিত সুদি মহাজনদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত রাখা।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, সুদি মহাজনদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(একে/এএস/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪)