সাতক্ষীরায় বসতভিটা উচ্ছেদ করে খাল খননের পাঁয়তারা
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় বসতভিটা উচ্ছেদ করে খাল খননের পায়তারা চলছে। শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের বড়কুপট গ্রামে বন্দোবস্তকৃত জমিতে শতাধিক পরিবার দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে আসলেও সেটি খালের জায়গা বলে দাবি করছে একটি পক্ষ। তবে আটুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু জানিয়েছেন, কাউকে উচ্ছেদ করে খাল খননের কোন যুক্তি নেই।
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকায় তদন্তও করতে এসেছিলেন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর(আরডিসি)।
খোজ নিয়ে জানা যায়, বড়কুপট গ্রামে খোলপেটুয়া নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রায় ৫০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে কয়েকশো পরিবার। জায়গাটি তাদের বন্দোবস্তকৃত। এই এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য নদীর সাথে সংযোগ রয়েছে। এলাকাটিতে বসতভিটা, মসজিদ, ঘের, পুকুর ও কবরস্থান রয়েছে। সম্প্রতি এই অঞ্চলটি খোসালখালী খালের অন্তর্গত বলে দাবি করছে একটি পক্ষ। তারা বলছে, যেহেতু এটি খালের জমি তাই খালটি খনন করলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় আব্দুল মালী, মকবুল মালী, গোলাম হোসেন গাজী, মোঃ আব্দুল বারী ও মোঃ শওকত মালীর নামে ওই জমি প্রায় ৫০ বছর আগে বন্দোবস্ত করা হয়। এর স্বপক্ষে তাদের কাছে বৈধ কাগজপত্রও রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি মোঃ নাসির আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বন্দোবস্ত বাতিল করা সহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টির অভিযোগ এনে সহকারী ভ‚মি কমিশনার বরাবর আবেদন করেছেন। এ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনও তৈরী করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দোবস্তকৃত জমির পূর্ব পাশে খোলপেটুয়া নদীর সাথে এই এলাকার মৎস্য চাষের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে এবং পানি নিষ্কাশনে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।
বড়কুপট মসজিদের ঈমাম আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করে বলেন, ‘এই এলাকার শত শত মানুষের নামাজ পড়ার জন্য একটিই মসজিদ রয়েছে। এটিও নাকি তাদের খালের অন্তর্গত। মসজিদটি ভেঙে ফেললে এলাকার মানুষ নামাজ পড়বে কোথায় ? এছাড়া এখানে কয়েকটি কবরস্থান রয়েছে। সেগুলোর কি হবে?’
বিষয়টি নিয়ে তোফাজ্জল হোসেন মালীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হিংসাত্বকভাবে নাসির আলী এই কাজটি করছে। তার ভাই পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা সাহাবুদ্দিন আহমেদ। তিনি ও তার ভাই ওই এলাকার রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি টাকা আত্মসাত করে নদীর চরে অবৈধ বাড়িঘর নির্মান করে আসছেন বহুদিন যাবত। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী কথা বলতে পারে না। এছাড়া তারা জিও ব্যাগ আত্মসাত করে এবং কেওড়া গাছ কেটে বিক্রয় করে। প্রতিবাদ করলে উল্টো হুমকি দেয়। তারা এলাকার মানুষের মঙ্গল চায় না বলেই তাদেরকে তাড়িয়ে খাল কাটতে চাচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য স্বপন কুমার বৈদ্য বাদীপক্ষের হয়ে বলেন, এখানে দীর্ঘদিন যাবত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। পূর্বে এখানে খোসালখালী খাল ছিলো। এটি খনন করলে এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।
গত ২১ জানুয়ারি রোববার এই এলাকায় তদন্ত করতে এসেছিলেন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মোঃ আরিফুজ্জামান। তবে তিনি সাংবাদিকদের সাথে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
১০ নং আটুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু জানান, ওই এলাকায় পানি নিষ্কাশনের পথ রয়েছে। এজন্য সেখানে পূর্ব থেকে বাস করে আসা পরিবারগুলো সরিয়ে খাল খনন করার কোন যৌক্তিকতা নেই। এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন তিনি।
(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২২, ২০২৪)