রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর থেকে : আজ ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে ফরিদপুর-৩ তথা সদর আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এ কে আজাদ। এসময় তার সাথে ছিলেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ব্যবসায়ীদের প্রধান সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেয়ার পর গতকাল তিনি মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন।

মনোনয়ন পত্র জমা দিয়ে এ কে আজাদ বলেন, 'আমি এই এলাকার সন্তান ও একজন ব্যবসায়ী হিসেবে ফরিদপুরে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজ করতে গিয়ে ফরিদপুরের সাধারণ মানুষের রক্তের সাথে একেবারে মিশে গেছি এবং সাধারণ মানুষও আমাকে অনেক আপন করে নিয়েছেন। আমার এলাকার জনসাধারণের জন্য ভালো কিছু করে যেতে চাই। আওয়ামী লীগের মুল ধারার নেতাকর্মী ও এলাকার গণ মানুষের অনুরোধেই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আশা করি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে ফরিদপুর ৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও জনসাধারণ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে। দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী এ কে আজাদ ফরিদপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হলে ফরিদপুরের মানুষের কর্মসংস্থানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিবেন বলেও জানান তিনি।

এ কে আজাদ ফরিদপুরে বিদ্যালয় ও কলেজ, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এছাড়া হা-মীম ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে এরই মধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর লক্ষ্য এখান থেকে তরুণ সমাজকে ট্রেনিং দিয়ে ঢাকায় নিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এ কে আজাদ আরো জানান, ভবিষ্যতে তার নির্বাচনী এলাকার (ফরিদপুর সদর) ১২টি ইউনিয়নেই এই রকম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, 'সংসদ সদস্য হলে আমার ১ নম্বর অগ্রাধিকার থাকবে আমার এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। সাধারণ কোনো কর্মসংস্থান নয়, বরং প্রশিক্ষণ দিয়ে তারপর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই, যাতে তাদের কর্ম জীবনে তারা প্রতিষ্ঠা পান।’ তিনি আরো জানান, 'হা-মীম গ্রুপে যে ৭৫ হাজার কর্মী কাজ করেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ফরিদপুর অঞ্চলের এবং ভবিষ্যতেও তাঁর নির্বাচনী এলাকার লোকজনকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

এ কে আজাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের যে ধারা চলেছে, তা অব্যাহত রাখতে ও স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরীতে বঙ্গবন্ধু কন্যার সহযাত্রী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি মনে করেন, ফরিদপুরের এই আসন থেকে নির্বাচিত হলে তিনি শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে পারবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন এবং জনগণের চাওয়া, আশা-আকাঙ্খা পুরণ করতে পারবেন।

এ কে আজাদ আরো বলেন, জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হলে তাঁর আরেকটি কাজ হবে ফরিদপুরের মানুষের জন্য একটি শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা। ১৯৬০-এর দশকে ফরিদপুরে পাট শিল্প গড়ে উঠেছিল, যা এখন অনেকটা বিলুপ্তির পথে। তবে পদ্মা সেতু নির্মাণের পর ফরিদপুরে শিল্পকলকারখানা গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্য, ভোলার গ্যাস ফরিদপুরে নিয়ে এসে একটি শিল্প এলাকা গড়ে তোলা, যাতে মানুষের কর্মসংস্থান করা যায়।’

এ কে আজাদ বলেন, ফরিদপুরে শিক্ষার মান ভালো না হওয়ার কারণে তরুণদের চাকরি পেতে সমস্যা হয়। তাই শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য তিনি কাজ করবেন। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা ও ওষুধপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। পাশাপাশি পদ্মা নদীর অন্য পাড়ে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার কাজ ত্বরান্বিত করা হবে। তিনি আরো বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা ভোটার উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ মুলক নির্বাচন চান, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হোক সেই ব্যাপারেও নিরুৎসাহিত করেছেন নেত্রী । আমি নির্বাচনে আশাতে সেটাও নিশ্চিত হবে ফরিদপুর সদর আসনে।

এ কে আজাদ দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে ফরিদপুর-৩ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি শামীম হককে। এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনিসহ মোট ১১ জন। ফরিদপুর -৩ আসনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও বিএনপি না থাকার কারণে ধারণা করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার মধ্যেই হবে ভোটের আসল লড়াই। তবে সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে অনেকেই মনে করছেন, ভোটের যুদ্ধে অনেক এগিয়ে রয়েছেন একে আজাদ।

(আরআর/এএস/নভেম্বর ৩০, ২০২৩)