স্টাফ রিপোর্টার : হাঁটা, সাইকেল চালানো ও গণপরিবহনের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে রাজধানীর হাতিরঝিলে হয়ে গেলো বর্ণাঢ্য সাইকেল র‍্যালি। শতাধিক নারী-পুরুষ সাইক্লিস্টের অংশগ্রহণে এই র‍্যালির আয়োজন করা হয়।

শুক্রবার (১৯ মে) সকালে এই সাইকেল র‍্যালি হয়। বিশ্ব ব্যাংক ও ব্র্যাক যৌথভাবে এই র‍্যালির আয়োজন করে। সকাল সাড়ে ৬টায় হাতিরঝিলের এম্ফিথিয়েটারের পাশ থেকে শুরু হয়ে পুলিশ প্লাজা, রামপুরা, মহানগর আবাসিক এলাকার পাশে অবস্থিত সেতু ঘুরে আবার এম্ফিথিয়েটারের পাশে এসে শেষ হয় র‍্যালিটি।

প্রধান অতিথি হিসেবে এই র‍্যালির উদ্বোধন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘সাইকেল নিজেদের চলাচলের জন্য এবং ব্যায়ামের জন্য উত্তম একটা বাহন। কিন্তু এই উত্তম বাহন ব্যবহার করার মত উত্তম পরিবেশ আমাদের ঢাকা শহরে নাই। বিশ্বের অনেক দেশেই সাইকেলের জন্য আলাদা লেন থাকে। তারা সেটা ব্যবহার করে অফিস আদালতে যায়। ঢাকা শহরে যে পরিবেশ তাতে আমরা যতই উৎসাহিত করি, সাইকেল নিয়ে বের হওয়ার আলাদা লেন নাই।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের রাস্তায় ঠেলাগাড়ি থেকে শুরু করে ২২ ধরনের যানবাহন চলাচল করে। আমাদের নগরায়ন পরিকল্পিত না। আমাদের স্থাপত্যবিদরা, নগরবিদরা, ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়াররা এসব খেয়াল রাখেন না। আমাদের ফুটপাথগুলো জনগণের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত করতে পারি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরের রাস্তার গাড়ি ধারণক্ষমতা দুই লাখ। কিন্তু ১২ লাখ গাড়ি রাস্তায় চলাচল করছে। ধারণক্ষমতার ৬ গুণ বেশি থাকার কারণে তীব্র পরিবেশ দূষণ, তীব্র যানজট, চারদিকে হর্নের শব্দে কান ঝালাপালা। মাস্ক ছাড়া রাস্তায় চলাচল করলে দেখা যাবে, আপনি শ্বাসতন্ত্রের ভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশরাও এ ধরনের নানা রোগে আক্রান্ত হয়।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা যদি সাইক্লিংয়ের পরিবেশ তৈরি করতে পারি, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকিগুলো, পরিবেশসংক্রান্ত ঝুঁকিগুলো দূর হতে পারে।’

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘অনেক কিছুই আমাদের এখন পুনর্বিবেচনা করা দরকার। আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্যের যেমন একটা ব্যাপার আছে পরিবেশের স্বাস্থ্যেরও একটা ব্যাপার আছে। সেই দিক থেকে সাইকেল চালানো একদিকে যেমন নিজের জন্য ভালো। তেমনি পৃথিবীর জন্যও ভালো। আমাদের রাস্তাঘাটগুলো তৈরিই করা হচ্ছে গাড়ির জন্য সাইকেলের জন্য না। সাইকেল চালকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে যদি পরিকল্পনা করা হয়, বিশেষ করে যে নতুন শহরতলী হচ্ছে, তাহলে আরও বেশি মানুষ বিশেষ করে তরুণরা সাইকেল চালাতে উৎসাহী হবে।’

আগামী দিনগুলোতে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানান আসিফ সালেহ।

ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের পরিচালক আহমেদ নাজমুল হুসেইন বলেন, ‘এবার জাতিসংঘ বলেছে, রিথিঙ্ক মবিলিটি। এতে তিনটা বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেমন, হেঁটে চলা, সাইকেলে চড়ে কাজে যাওয়া, স্কুলে যাওয়া, এবং গণপরিবহনের ব্যবহার। সাইকেলে চলা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আমরা এখানে একটা সাইকেল র‍্যালির আয়োজন করেছি। আমরা মনে করি, সবাই যাতে সাইকেলে চড়ে কাজে যায়, স্কুলে যায়, অফিসে যায়, যেতে পারে। এ জন্য অবকাঠামোর প্রয়োজন আছে। এগুলোর জন্য আমরা অ্যাডভোকেসি ও সচেতনতা তৈরি করছি।’

হাতিরঝিল এম্ফিথিয়েটারের পাশে এ উপলক্ষে একটি ফটোবুথ স্থাপন করা হয়, যেখানে সচেতনতামূলক নানা প্ল্যাকার্ড নিয়ে ছবি তোলেন অনুষ্ঠানে আসা সাইক্লিস্ট ও দর্শনার্থীরা।

সপ্তমবারের মত এবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে জাতিসংঘ সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ। এ বছর বেছে নেওয়া হয়েছে ১৫ থেকে ২১ মে পর্যন্ত সময়কে। সপ্তাহটিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে এই ক্যাম্পেইনে হ্যাশট্যাগ রিথিঙ্ক মবিলিটি, হ্যাশট্যাগ স্ট্রিটস ফর লাইফ, হ্যাশট্যাগ রোড সেফটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

(ওএস/এএস/মে ১৯, ২০২৩)