E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

ইউনূস সেন্টারের ব্যাখ্যার অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রেসবিজ্ঞপ্তি

২০২৪ জুন ০৩ ২২:৫৮:৩৫
ইউনূস সেন্টারের ব্যাখ্যার অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রেসবিজ্ঞপ্তি

স্টাফ রিপোর্টার : গত ২৬ মে (রবিবার) দুর্নীতি দমন কমিশনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ে অভিযোগ করে গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩০ মে ইউনূস সেন্টার একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানায়। গ্রামীণ ব্যাংক সোমবার এক পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে, প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনূস সেন্টার গ্রামীণ ব্যাংকের অভিযোগসমূহের যে জবাব দিয়েছে, তা অসত্য, স্ববিরোধিতাপূর্ণ ও আইনের অপব্যাখ্যা।

গ্রামীণ ব্যাংকের অভিযোগ - নব্বইয়ের দশকে যখন ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন, তখন চট্টগ্রামে অবস্থিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশন লিমিটেডকে গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ম-কানুন না মেনে প্রায় ৯.৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

জবাবে ইউনূস সেন্টার দাবি করে, গ্রামীণ ব্যাংক এবং প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে এটা খুব স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে প্যাকেজেসের মালিকরা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কোনো প্রকার আর্থিক সুবিধা যেমন, লভ্যাংশের ভাগ, জমির ভাড়া, ভবন ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য কোনো ধরনের অর্থ নেবে না।

চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এবং প্যাকেজেসের প্ল্যান্ট এবং সম্পত্তি গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করার পর প্যাকেজেস কর্পোরেশন তখন থেকে আর তা মালিকদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, মালিকদের সঙ্গে আর কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি। প্যাকেজেস কর্তৃক প্রাপ্ত কোনো ঋণ কোনোভাবেই কোম্পানির মালিকদের কাছে যাবার সুযোগ থাকে না। ইউনূস সেন্টারের এই ব্যাখ্যার অসামঞ্জস্যতাপূর্ণ বিষয় হলো- যে চুক্তির বরাত দিয়ে তারা আর্থিক লেনদেন হয়নি দাবি করছেন সেই চুক্তির ২২ নং ধারা অনুযায়ী, কোম্পানির অর্জিত নীট মুনাফা আয়কর কর্তনের পর সমানভাবে ৫০:৫০ ভিত্তিতে উভয়পক্ষের মধ্যে বন্টন হবে। চুক্তির মেয়াদকালে এই মুনাফা কোম্পানি মুনাফা হিসেবে গ্রহণ করবে না, কিন্তু এই মুনাফা কোম্পানির মালিকানাধীন অর্থ হিসেবে কোম্পানিরই হেফাজতে থাকা একটি তহবিলে জমা হবে। অর্থাৎ প্যাকেজেস কর্পোরেশন উহার প্রাপ্য মুনাফা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করবে না, কিন্তু প্যাকেজেস কর্পোরেশন অংশের মুনাফা নিজের টাকা হিসেবে আলাদা করে নিজের কাছেই জমা রাখবে।

গ্রামীণ ব্যাংকের দাবি, পরিচালকের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং কোন আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে ডক্টর ইউনুস তো গ্রামীণ ব্যাংককে নিজের ইচ্ছামত চালাতেন, তার সকল দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্যের ভেতর দিয়ে সেটা এখন খুবই খুবই স্পষ্ট। তিনি শুধু ঋণ প্রদান করেই ক্ষান্ত হননি, ঐ ঋণের সুদ ও আসলের অংশ মওকুফ করার মধ্য দিয়ে তার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানকে লাভবান করে গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতিসাধন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন, এবং গ্রামীণ ব্যাংকের সকল কর্মী ও ঋণগ্রহীতাদের সাথে প্রতারণা করেছেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের দুদকের কাছে অভিযোগ ইউনূস ও তার পরিবার ব্যাংকের কোটি কোটি টাকার প্রিন্টিং সামগ্রী চড়া দামে ছাপানোর জন্য পারিবারিক কোম্পানিকে কার্যাদেশ দিয়ে বিপুল আর্থিক সুবিধা নেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউনূস সেন্টার ব্যাখ্যা দিয়েছে যে, এই চুক্তি ২৫ বছর যাবত কার্যকর ছিল। এই ২৫ বছরে গ্রামীণ ব্যাংক প্যাকেজেসকে মোট ঋণ দিয়েছে ৯.৬৬ কোটি টাকা। প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মালিকরা, অর্থাৎ অধ্যাপক ইউনূস ও তার পরিবার, গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে চুক্তির মাধ্যমে কোনো আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেননি

গ্রামীণ ব্যাংক সেই ব্যাখ্যার অসামঞ্জস্যতা জানাতে গিয়ে বলছে, যে চুক্তি নিয়ে এত কথা বলা হচ্ছে, সে চুক্তিটি কত বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিলো, সে বিষয়টি ইউনুস সেন্টার চতুরতার সাথে গোপন করে যাচ্ছে। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ১৫ বছরের জন্য, ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। অথচ চুক্তির সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও প্রফেসর ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের সকল মুদ্রণের কাজ প্যাকেজেস কর্পোরেশন পেতে থাকে। এরপরেও প্রায় ২০২১ সাল পর্যন্ত প্যাকেজেসকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রিন্টিং এর কাজ দেয়া হতে থাকে। শুধু তাই নয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৬ বছর পর ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ সামগ্রী নামক আরেকটি আলাদা প্রতিষ্ঠানকে প্যাকেজেস কর্পোরেশন লিঃ এর ম্যানেজিং এজেন্টের দায়িত্ব প্রদান করে প্যাকেজেস কর্পোরেশন লিঃ এর সকল মুনাফা তার দু’টি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান।

এরকম আরও তিনটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউনুস সেন্টারের দেওয়া ব্যাখ্যার অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

(ওএস/এসপি/জুন ০৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৮ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test