E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মার্কিন ইতিহাসে প্রথম একজন প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন 

২০২৪ মে ৩১ ১৬:৫৭:৫২
মার্কিন ইতিহাসে প্রথম একজন প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন 

শিতাংশু গুহ


মার্কিন ইতিহাসে এই প্রথম একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে একটি আদালতে বৃহস্পতিবার ৩০শে মে ২০২৪ ব্যবসায়ে কারচুপির ৩৪টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। বিচারক জুয়ান মার্চেন ১১ই জুলাই ২০২৪ দন্ড বিধান করবেন বলে জানিয়েছেন এবং ট্রাম্পকে আদালতে উপস্থিত হবার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প নিজের পরিচয়ে এখন মুক্ত। 

রায়ের পর ট্রাম্প বলেছেন, আসল রায় হবে ৫ই নভেম্বর। হোয়াইট হাউস সরাসরি মন্তব্য করেনি, তবে বলেছে, আইন এর নিজস্ব পথে চলবে। বাইডেন ক্যাম্পেইন বলেছে, কেউই বিচারের উর্দ্ধে নন। সামাজিক মাধ্যমে বাইডেন বলেছেন, ব্যালটের মাধ্যমেই ট্রাম্পকে ঠেকাতে হবে’। স্পীকার মাইক জনসন বলেছেন, এ যায় মার্কিন ইতিহাসে একটি ‘লজ্জ্বাজনক’ ঘটনা, তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আপিলে ট্রাম্প নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।

ডেমক্রেট সমর্থকরা রায়ের পর আদালত চত্বরে আনন্দ-মিছিল করে, রিপাবলিকানরা অনেকেই কেঁদে ফেলেন। একজন ট্রাম্প সমর্থক বলেছেন, এই রায় ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে নিয়ে যাবে। রিপাবলিকান রাজনীতিকরা উষ্মা প্রকাশ করে ট্রাম্পের পেছনে জড়ো হচ্ছেন। রায়ে স্টরমি ড্যানিয়েল আবেগ আপ্লুত হয়েছেন। মাইকেল কোহেন বলেছেন, সত্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। রাতে ট্রাম্প একটি ফান্ড-রেইজিং ডিনারে মিলিত হ’ন। ম্যালিনিয়া ট্রাম্প পুত্র ব্যারনসহ নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন, তবে ডিনারে যোগ দেননি। বিচারেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।

ট্রাম্পের এটর্নিগন জানিয়েছেন, তারা আপিল করবেন, একাধিক আপিল হবার সম্ভবনা রয়েছে। রায় কার্যকর হবে সকল আপীলের শুনানীর শেষে। আপিলের শুনানি শেষ হতে বছর চলে যাবে। তাই বলা হচ্ছে, নির্বাচনের আগে রায় কার্যকর হবার সম্ভবনা নেই? এই মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবসায় জালিয়াতির ৩৪টি অভিযোগ ছিলো। ১২জন জুরি সর্বসম্মতভাবে ট্রাম্পকে দোষী ঘোষণা করেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন একজন দণ্ডিত অপরাধী। তথাপি তিনি নির্বাচন করতে পারবেন এবং জয়ী হলে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না, কারণ মামলাটি ষ্টেটের, প্রেসিডেন্ট ফেডারেল সাজা মাফ করতে পারেন, ষ্টেটের সাজা মাফ করার অধিকার তার নেই? এরায় নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে সেটি এখন দেখার বিষয়। প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্পের ভোটাররা তাঁকে সমর্থন করবে? বিভিন্ন জরিপ বলছে, ট্রাম্পের ভোটাররা মনে করছেন, ট্রাম্পকে ফাঁসানো হচ্ছে, তাই ভোট কমে যাবার সম্ভবনা নেই।

ট্রাম্প আগাগোড়া এ বিচারকে ‘হুইচ-হান্ট’ বলেছেন, দণ্ডিত হবার পরও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, আজ মার্কিন ইতিহাসে একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন্। ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকার ইতিহাসে এমনটি ঘটতে পারে তা অভাবনীয়, ‘আমি রাজনৈতিক বন্দি’। ট্রাম্প এটিকে কারচুপির বিচার বলে দাবি করেন এবং বিচারকে দুর্নীতিগ্রস্থ হিসাবে মন্তব্য করেন। ট্রাম্প বলেন, এ বিচার শেষ হতে বহু বাকি, আমি নির্দোষ এবং সংবিধান রক্ষায় সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। তিনি বলেন, এটি বাইডেন করেছেন তার প্রতিদ্ধন্ধিকে আহত ও আঘাত করতে, এটি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ। তিনি বলেন, আমেরিকা এখন সংকটে নিমজ্জিত।

নিউইয়র্কে ট্রাম্পের মামলায় মঙ্গলবার ২৮শে মে ২০২৪ ট্রাম্প পক্ষ ও ষ্টেটপক্ষ ক্লোজিং আর্গুমেন্ট শেষ করেন। বুধবার এটি জুরিদের হাতে যায়। বুধ ও বৃহস্পতি দুই দিনে প্রায় ১০ঘন্টা বৈঠকের পর জুরিগন ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করেন। ট্রাম্পের ভাগ্য এখন বিচারক জুয়ান মার্চেন-এর হাতে। বিচারক ট্রাম্পকে জেলে পাঠাতে পারেন, অথবা প্রবেশন দিতে পারেন, বা অন্য যেকোন ব্যবস্থা নিতে পারেন। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে এটি ট্রাম্পের প্রথম অপরাধ, তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট, তার নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত, তাই হয়তো তার জেল হবেনা।

নিউইয়র্কের আইনে ব্যবসায় জালিয়াতি সচরাচর ফৌজদারি নয়, এক্ষত্রে বলা হচ্ছে ট্রাম্প সবকিছু ধামাচাপা দিতে ষড়যন্ত্র করেছেন, ভোটারদের প্রতারিত করেছেন এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন, এজন্যে এটিকে ফৌজদারি মামলায় উন্নীত করা হয়েছে। এ মামলায় মডেল স্টরমী ড্যানিয়েল ও মাইকেল কোহেন ছিলেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মূল সাক্ষী। এতে মোট সাক্ষী ছিলেন ২২জন। ট্রাম্প এ মামলায় সাক্ষ্য দেননি।

ক্লোজিং আর্গুমেন্ট

এরআগে মঙ্গলবার ক্লোজিং আর্গুমেন্টে ষ্টেটপক্ষ বলেছেন, মডেল স্টরমী ড্যানিয়েলকে অর্থ প্রদানের বিষয়টি চাপা রেখেছিলেন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে। মাইকেল কোহেন টাকাটা দিলেও ট্রাম্প যে সেটি অন্যায়ভাবে পরিশোধ করেছেন এর ভুরিভুরি প্রমান আছে। ট্রাম্প পক্ষ বলেছেন, সরকারি কৌঁসুলিরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমান করতে পারেননি। মিথ্যাবাদী মাইকেল কোহেন-র বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘গ্যাগ’ অর্ডার ছিলো, তাই এ মামলা নিয়ে বিচার চলাকালে তিনি কথা বলতে পারেননি। প্রতিদিন তিনি হাজিরা দিয়েছেন। প্রতিনিয়ত তিনি গ্যাগ অর্ডার ভেঙ্গেছেন, মোট ১০বার। বিচারক ফাইন করছেন। বলেছেন, এরপর জেলে পাঠাবেন। ট্রাম্প পক্ষ দু’বার ‘মিস-ট্রায়াল’ দাবি করেন, বিচারক তা নাকচ করেন্।

বিচার শুরু

নিউইয়র্কে ট্রাম্পের ফৌজদারি বিচার শুরু হয়েছে সোমবার ১৫ই এপ্রিল ২০২৪। মার্কিন ইতিহাসে এই প্রথম একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধে বিচারের সম্মুখীন হলেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবসায় জালিয়াতি সংক্রান্ত ৩৪টি অভিযোগ, দোষী সাব্যস্ত হলে তার ৪বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এটিকে সংক্ষেপে ‘হাস মানি ট্রায়াল’ বলা হচ্ছে। ২০১৬-এ নির্বাচনের আগে মডেল স্ট্ররমি ড্যানিয়েলের মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্পের এটর্নি মাইকেল কোহেন পর্ণস্টার স্ট্ররমি ড্যানিয়েলকে ১৩০,০০০ মার্কিন ডলার দেন্। বলা হচ্ছে, অর্থ দেয়াটা অপরাধ নয়, বরং ষড়যন্ত্র করে বিষয়টি গোপন রেখে ট্রাম্প ভোটারদের প্রতারিত ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন-যা অপরাধ। ঐতিহাসিক এ মামলার প্রথম দিনে জুরী নির্বাচন শুরু হয়। বাদী-বিবাদী পক্ষ একমত হয়ে বিচারকের সম্মতিক্রমে মোট ১২জনের জুরী প্যানেল মনোনীত করেন। অতিরিক্ত আরো ৬জন জুরীও মনোনীত করা হয়। ট্রাম্পকে প্রতিদিন আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়েছে। শুরুতে বিচারক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি বুঝতে পারছেন যে, আপনি ফৌজদারি মামলার আসামী? ট্রাম্প হ্যাঁ সূচক জবাব দেন্। এ মামলাটি হচ্ছে, “দি পিপুল অফ দি ষ্টেট অফ নিউইয়র্ক ভার্সেস ডোনাল্ড ট্রাম্প”। বিচারকের নাম জুয়ান মার্চেন। ট্রাম্পের প্রধান দু’জন এটর্নি হচ্ছেন, টড ব্লাঞ্চ ও এমিল বোভে।

৪টি ফৌজদারি মামলা

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৪টি ফৌজদারি মামলায় প্রায় ৮৯টি অভিযোগ রয়েছে। এগুলোর সর্বশেষ অবস্থা হচ্ছে: ওয়াশিংটন ডিসি-তে ২০২০ নির্বাচনের ফলাফল বানচালের ষড়যন্ত্র দায়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা পিছিয়ে গেছে। এটি শুরুর কথা ছিলো ৪ঠা মার্চ। ট্রাম্প আপিল করেছেন, তিনি দাবি করেন যে, ৬ই জানুয়ারি তিনি যা করেছেন, তা প্রেসিডেন্ট হিসাবে করেছেন, সুতরাং এটি বিচারের আওতায় পড়েনা। ট্রাম্পের অপর মামলা নিউইয়র্কের ম্যানহাটন সুপ্রিমকোর্টে ব্যবসায় জালিয়াতি, যা শেষ হয়েছে এবং তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ট্রাম্পের অন্য দু’টি ফৌজদারি মামলার একটি হচ্ছে ফ্লোরিডায়, সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর ক্লাসিফাইড ডক্যুমেন্ট অযত্নে নিজের কাছে রাখা এবং তাঁর মার্-এ-লগো বাসস্থান থেকে সেগুলো উদ্ধারে বাধা দেয়া। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অন্য মামলাটি হচ্ছে, জর্জিয়া ষ্টেট নির্বাচনে বাঁধা সৃষ্টি। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি রিপাবলিকান দলের ফ্রন্ট-রানার। জয়ী হলে ২০জানুয়ারি ২০২৫-এ হোয়াইট হাউসে উঠবেন। নির্বাচন মঙ্গলবার ৫ই নভেম্বর ২০২৪। প্রতিদ্ধন্ধী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test